স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের জামানতযুক্ত ও জামানতবিহীন উৎসসমূহ লিখ
ভূমিকা : সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য যে অর্থ বা তহবিলের সংস্থান করা হয় তাকে স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান বলা হয়। স্বল্পমেয়াদি অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে কিছু কিছু উপাদান প্রভাবিত করে থাকে। যে সকল উপাদান প্রভাবিত করে থাকে সেগুলো নিম্নরূপ—
স্বল্পমেয়াদি অর্থায়নের জামানতযুক্ত ও জামানতবিহীন উৎসসমূহ লিখ
১. ব্যবসায়ের আকার : ব্যবসায়ের আকারের ওপর ও স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানের পরিমাণের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বড় বড় ব্যবসাগুলো যেকোনো শ্রেণির অর্থসংস্থান করতে পারে। তাদের মধ্যমেয়াদি কিংবা দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করা আদৌ কঠিন ব্যাপার নয়। তবে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হয়।
২. ব্যবসায়ের প্রকৃতি স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানের পরিমাণ নির্ভর করে। যেমন-উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রয়োজন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক বেশি। ফলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে অধিক হারে স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান ব্যবহার করতে হয়।
৩. বাজারের অবস্থান : বাজারের অবস্থানের উপর ও স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান ব্যবহারের পরিমাণ বহুলাংশে নির্ভর করে । যে সমস্ত পণ্যের চাহিদা বাজারে যত বেশি সে সমস্ত পণ্য সুবিধামত ক্রয় করার উদ্দেশ্যে ক্রেতাগত তত আগ্রহ প্রকাশ করে এবং অনেক সময় অগ্রিম অর্থও প্রদান করে ।
ফলে ঐ সমস্ত পণ্য উৎপাদনকারীগণ সহজেই অধিক পরিমাণ স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করতে পারে। আবার ঐ সমস্ত পণ্য বন্ধক দিয়েও প্রচুর ঋণ পাওয়া যায়। অপরপক্ষে, যে সমস্ত পণ্যের চাহিদা বাজারে কম ঐ সমস্ত পণ্য উৎপাদনকারী অধিক হারে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পেতে ব্যর্থ হয়ে থাকে ।
৪. বিক্রয়ের আকৃতি ও প্রকৃতি : বিক্রয়ের আকৃতি ও প্রকৃতির উপর স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানের ব্যবহারের পরিমাণ নির্ভর করে । যে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ধারে বেশি হয় ও ধারের সময়সীমাও বেশি এসব ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রয়োজনীয়তাও বেশি। অপরপক্ষে, যে সব প্রতিষ্ঠানের নগদ আকারে বিক্রয় বেশি তাদের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রয়োজনীয়তা তুলনামূলকভাবে কম ।
৫. উৎপাদন চক্র : উৎপাদন চক্র স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান ব্যবহারের পরিমাণকে প্রভাবিত করে থাকে। উৎপাদন চক্র যত ব্যাপক, স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান ব্যবহারের পরিমাণও তত বেশি দেখা যায়। অপরদিকে, উৎপাদন চক্র তুলনামূলকভাবে যত ছোট, স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তত কম দেখা যায়। কারণ উৎপাদন চক্র বড় হলে চলতি মূলধন বিভিন্ন উৎপাদন স্তরে আটকা পড়ে থাকে। ফলে অতিরিক্ত চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থানের ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
৬. ব্যবসায়ের সুনাম : যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ব্যবসায় জগতে যত বেশি সেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাপক পরিমাণে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, যেসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ব্যবসায় জগতে যত কম তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণও তত কম পাবার সম্ভাবনা থাকে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রধান উপাদানসমূহ ছাড়াও আরও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। যেগুলে স্বল্পমেয়াদি অর্থসংস্থান ব্যবহারের পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবস্থাপনার মানসিকতা, বহিরাগতের সঙ্গে সন্তোষজনক চুক্তির ব্যবস্থা ইত্যাদি ।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।