HBSAG কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা, HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার,HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার, HBSAG কেন হয়? লক্ষণ ও চিকিৎসা কি?

হেপাটাইটিস বি কি ?

হেপাটাইটিস বি রোগটি হলো লিভারে ভাইরাল সংক্রমণ অর্থাৎ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) দ্বারা সৃষ্ট  লিভারের একটি সংক্রমণ যা লিভারের টিস্যুতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।এটি সাধারণত তীব্র সংক্রমণ হিসেবে শুরু হয় তবে তা স্বল্পমেয়াদী হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা দীর্ঘমেয়াদী হয় যা সময়ের সাথে সাথে কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই লিভারের মারাত্নক ক্ষতি (যেমন: লিভার সিরোসিস, লিভার ফেইলিউর ইত্যাদি) সাধন করতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স যত কম হয়, রোগটির সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। HBSAG কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা, HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার,HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার, HBSAG কেন হয়? লক্ষণ ও চিকিৎসা কি?

HBSAG কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা, HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার,HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার, HBSAG কেন হয়? লক্ষণ ও চিকিৎসা কি?, HBSAG লক্ষণ ও চিকিৎসা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর অনুমান অনুযায়ী , প্রতিবছর ১.৫ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। ২০১৯ সালে, ২৯৬ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল এবং ৮,২০,০০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল যার বেশীরভাগই লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমাতে ( প্রাথমিক লিভার ক্যান্সার) আক্রান্ত ছিল।

হেপাটাইটিস বি সংক্রমণটিকে নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Table of Contents

হেপাটাইটিস বি HBSAG কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা, HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার,HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার, HBSAG কেন হয়? লক্ষণ ও চিকিৎসা কি? এর লক্ষণ সমূহ

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ০১ থেকে ০৬ মাস পর্যন্ত কোনো উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। তবে  রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে জানা যায়।তবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের যেসব উপসর্গ প্রকাশ পায় তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা তুলে ধরা হলো-

  • জন্ডিস হয় অর্থাৎ ত্বক বা চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায় এবং প্রস্রাব গাড় হয় এবং বাদামী বা কমলা হয়ে যায়।
  • হালকা রঙের মলত্যাগ হয়।
  • চরম ক্লান্তি অনূভুত হয়।
  • নিম্ন তাপমাত্রার জ্বর হয়।
  • বমি বমি ভাব,বমি এবং পেটে ব্যথা হয় যা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
  • তীব্র হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লিভার ফেইলিউর হয় যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • ক্ষুধা হ্রাস পায় যা ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে।
  • জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং ফুলে যায়।

তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত প্রত্যেকেই এসব উপসর্গ অনুভব করবে এমন না। তবে কিছু লোকের ক্ষেত্রে এসবের মাঝে দু-একটি উপসর্গ থাকতে পারে কিংবা কোনো লক্ষণই প্রকাশ নাও পেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার যদি মনে হয় যে আপনি কোনো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন তবে আপনার উচিত হবে কোনো রেজিস্টার্ড মেডিকেলে যোগাযোগ করে টেস্ট করা এবং চিকিৎসা নেওয়া।

হেপাটাইটিস বি এর কারণ

হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের কারণ হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV)। এটি একটি হেপাডিএনএ গ্রুপের ভাইরাস। এই ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড অর্থাৎ সুপ্তিকাল ৪৫-১৮০ দিন। এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে নতুন ব্যক্তিকে সংক্রমিত হয় যেমন: আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, লালা, কামরস, বীর্য এবং মা এর দুধপানের মাধ্যমে নবজাতক ও আক্রান্ত হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি কিভাবে ছড়ায়

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নিম্নোক্ত মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নতুন ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়-

  • গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সময় আক্রান্ত মা থেকে নবজাতক সংক্রমিত হয়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত অন্য কোনো সুস্থ্য ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শে আসলে এর মাধ্যমে নতুন ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  • শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরল যেমন: লালা, মাসিক, যোনি ও সেমিনাল তরলের সাহায্যে সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে নতুন ব্যক্তিতে সংক্রমণ হতে পারে।
  • জীবাণুমুক্ত করা হয়নি এমনি মেডিকেল বা ডেন্টাল যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দ্বারা নতুন ব্যক্তিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  • ট্যাটু কিংবা ছিদ্র করাতে ব্যবহৃত সূঁচের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ হতে পারে।
  • দূষিত সূঁচ,সিরিঞ্জ কিংবা ধারালো বস্তুর পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমেও নতুন ব্যক্তিতে সংক্রমণ হয়।
  • হেপাটাইটিস বি যৌন তরল এবং অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক অর্থাৎ সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে কিংবা ভ্যাকসিন নেয়নি এমন ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা নতুন ব্যক্তি সংক্রমিত হবে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত রেজার, টুথব্রাশ এবং নেইল কাটার কোনো সুস্থ্য ব্যক্তি ব্যবহার করলেও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন।

হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা

স্বল্পমেয়াদী ও তীব্র হেপাটাইটিস বি-এর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে শরীরের আরাম ও পর্যাপ্ত পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে বমি ও ডায়রিয়ার মাধ্যমে যে পরিমাণ তরল শরীর থেকে বের হয় তার ঘাটতি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার যেমন: গ্লুকোজ সরবত খাওয়ানো যেতে পারে। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় ঔষধ খাওয়া যাবেনা।

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের চিকিৎসা রয়েছে তবে তা সারাজীবন নিতে হয়।এক্ষেত্রে চিকিৎসা হিসাবে এন্টিভাইরাল মেডিসিন দেওয়া হয়।এসব মেডিসিন মূলত সিরোসিসের অগ্রগতি মন্থর করা, লিভার ফেইলিউর ও লিভার ক্যান্সারের সম্ভবনা কমায়। ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর অনুমান অনুযায়ী, দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি সংক্রমণে 12% থেকে 25% লোকের চিকিৎসার প্রয়োজন হয় যা নির্ভর করে রোগীর বাহ্যিক এবং লিভারের অবস্থার উপর।

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত লোককেই চিকিৎসা শুরুর পর সারাজীবন চালিয়ে যেতে হয়। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই রোগ শনাক্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে মারা যায়। উন্নত দেশগুলোতে আক্রান্তের শরীরে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি কিংবা ট্রান্সপ্লান্টেশনের দ্বারা সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়।

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের চিকিৎসা কয়েকভাবে করা যেতে পারে। তন্মধ্যে কয়েকটি হলো-

১. এন্টিভাইরাল ঔষুধ এর ব্যবহার

যেমন- এনটেকাভির (বারাক্লুড), অ্যাডেফোভির (হেপসেরা), টেনোফোভির (ভাইরাড), ল্যামিভিউডিন (এপিভির) এবং টেলবিভুডিন  এসব এন্টিভাইরাল ঔষুধ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং লিভারের ক্ষতি করার ক্ষমতা হ্রাস করতে সহয়তা করে।

২. ইন্টারফেরন ইনজেকশন গ্রহণ

ইন্টারফেরন আলফা-২বি (ইন্ট্রন এ) হলো হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানবশরীরে  উৎপাদিত একটি পদার্থ। যারা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা এড়াতে চান তাদেরকে ইন্টাফেরন ইনজেকশন দেওয়া হয়।গর্ভবতী নারীদের এটা ব্যবহার করা উচিত নয়। এর প্বার্শপ্রতিক্রিয়াসমূহ হলো- বমি বমি ভাব,বমি, বিষণ্নতা এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।

৩.লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন

যদি আক্রান্তের লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ডাক্তাররা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করেন অর্থাৎ আক্রান্ত লিভার এর জায়গায় নতুন লিভার প্রতিস্থাপিত করা হয়।এক্ষেত্রে প্রতিস্থাপিত করার জন্য লিভার মৃত দাতাদের কাছ থেকে আসে।

হেপাটাইটিস বি এর ঔষধ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ দমন করার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ হিসাবে টেনোফোভির বা এনটেকাভির ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসা শুরু করা বেশিরভাগ লোককে সারাজীবন এটি চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও রেজিস্ট্রার্ড পরামর্শ অনুযায়ী এসব এন্টিভাইরাল ঔষুধ যেমন- এনটেকাভির (বারাক্লুড), অ্যাডেফোভির (হেপসেরা), টেনোফোভির (ভাইরাড), ল্যামিভিউডিন (এপিভির) এবং টেলবিভুডিন সেবন করা যেতে পারে। এরপরও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের নতুন ও কার্যকরী ঔষধ উৎপাদন গবেষণা এখনও চলমান।

হেপাটাইটিস বি এর টেস্ট

যেহেতু এই রোগের তেমন কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায়না তাই যতোটা প্রকাশ তা দেখে যদি আপনার ডাক্তার ধারণা করেন যে আপনি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত তবে সেক্ষেত্রে লিভার ফুলে গেছে কিনা সেটা দেখার জন্য আপনার রক্তের দুটি পরীক্ষা করা হবে। টেস্ট দুটি হলো:

১.হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিজেন টেস্ট ( HBsAg)

অ্যান্টিজেন হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রোটিন যা ফরেন পার্টিকেল। অ্যান্টিজেনগুলি শরীরে প্রবেশের ০১ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমিতের রক্তে দেখা যায়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমিতের শরীরে এন্টিজেনের মাত্রা দেখা হয়। যদি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হয় তবে তা ০৪ থেকে ০৬  মাস পরে চলে যায়। তবে যদি ০৬ মাসেও না যায় তবে বুঝতে হবে আপনি দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত।

২. হেপাটাইটিস বি সারফেস এন্টিবডি (anti-HBs)

এন্টিবডি হচ্ছে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক,ইমিউন কোষসৃষ্ট প্রোটিন। এই টেস্টের মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। সুস্থ্য হওয়ার পর এই এন্টিবডিই আপনাকে সারা জীবনের জন্য হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধী করে তোলে।

এক্ষেত্রে যদি দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি হয় তবে তা কতোটা গুরুতর তা বোঝার জন্য  ডাক্তার আপনার লিভারের টিস্যুর নমুনা নিতে পারেন যা বায়োপসি নামে পরিচিত। লিভারের ক্ষতির মাত্রা বোঝার জন্য লিভারের আল্ট্রাসাউন্ড নেওয়া হয়।

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন / টিকা

পৃথিবীব্যপী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অনেক ভ্যাকসিন যেমন: Engerix-B, Heplisav-B, Recombivax HB এবং HEPAVAX-B ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে। তন্মধ্যে বাংলাদেশে  HEPAVAX-B ভ্যাকসিনটি বেশী পাওয়া যায়।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায় হলো হেপাটাইটিস বি  এর ভ্যাকসিন নেওয়া। হেপাটাইটিস বি এর  ভ্যাকসিন জন্মের সময় সমস্ত নবজাতকের জন্য এবং সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের (যেমন: পুলিশ কর্মী, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, ফায়ার ব্রিগেড কর্মী, একাধিক যৌন সঙ্গী বা যারা শিরায় ওষুধ ব্যবহার করেন, দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এবং যারা হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত কারও সঙ্গে থাকেন) নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন ছয় মাসের ব্যবধান ধরে চার ধাপে দিতে হয়। ২০০৩-২০০৫ সালের মাঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর প্রস্তাবিত ভ্যাকসিনেশন সময়সূচি (জন্মের ০৬,১০ ও ১৪ সপ্তাহ বয়সে) বাংলাদেশে ইমিউনাইজেশনের সম্প্রসারিত প্রোগ্রামে (EPI) চালু করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শিশু জন্মের ২৪ ঘন্টার মাঝে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন এর প্রথম ডোজ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

HEPAVAX-B এর তিনটি ইন্ট্রামাস্কুলার ডোজ থাকে।যার প্রথম টি একটি নির্দিষ্ট তারিখে দেওয়া হয়। ২য় ডোজটি প্রথমটির ০১ মাস পর দেওয়া হয়  এবং ৩য় ডোজটি ২য় ডোজের অন্তত ০৪ মাস পর দেওয়া হয়।অতঃপর ১ম ডোজ দেওয়ার সময় থেকে হিসাব করে ১২ মাস পর বুষ্টার ডোজ দেওয়া হয়।

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের একটি অংশ থাকে যাকে সারফেস অ্যান্টিজেন বলা হয়। এই অ্যান্টিজেন শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহায়তা করে যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যদি একজন ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেন, তবে তার শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসের এন্টিজেনকে  দ্রুত শনাক্ত করতে পারবে এবং শরীরে ভাইরাস বংশবৃদ্ধি কিংবা কোনো ক্ষতি করার আগেই তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে।

হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেওয়ার নিয়ম

সাসপেনশনকে ভালোভাবে মিশানোর জন্য তরল ভ্যাকসিনের শিশিটিকে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। তারপর প্রতিটি ইনজেকশনের জন্য একটি জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ও সুই নিতে হবে। শিশুদের জন্য সাসপেনশনের  ০.৫ মিলিলিটার এবং বয়স্কদের জন্য ১.০ মিলিলিটার ডোজ সিরিঞ্জে নিতে হবে। তারপর শিশুদের উরুর অগ্রভাগের দিকে এবং বয়স্কদের ডেল্টয়েড পেশিতে ইন্ট্রামাস্কুলারভাবে পুুশ করতে হবে। প্রথম ডোজ এর সময়সূচি লিপিবদ্ধ করতে হবে। পরবর্তী ডোজের সময়সূচি প্রথম ডোজের সময় থেকে হিসাব করতে হবে।

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন বা HEPAVAX B ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে য়েসব প্বার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তা হলো-

  • যেখানে পুশ  করা হয়েছিল সেই বাহুতে ব্যথা, লালভাব বা ফোলাভাব।
  • মাথাব্যথা হওয়া।
  • জ্বর অনুভব করা।
  • ক্লান্তি।
  • বমি বমি ভাব হওয়া।
  • এনার্জির সমস্যা যেমন: আমবাত, শ্বাসকষ্ট, মুখ ঠোঁট, জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া
  • খিচুনি।
  • মেনিনজাইটিস
  • গুইলেন বার এ সিনড্রোম ( একটি বিরল রোগ যেখানে ইমিউনিটি সিস্টেম স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যাবলি ব্যহত করে)

HEPAVAX B ভ্যাকসিন নেওয়ার পর এসবের মাঝে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

হেপাটাইটিস বি হলে করনীয়

হেপাটাইটিস বি সংক্রমিত রোগীকে সুস্থ রাখার জন্য রোগীর চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।রোগীর যত্ন নেওয়ার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগী হওয়ার আবশ্যক –

  • রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামে উৎসাহিত করতে হবে।কেননা এসময় রোগী দুর্বল থাকবে এবং ক্লান্ত অনুভব করবে।
  • পর্যাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে যা রোগীর ইমিউন সিস্টেম উন্নয়নে সহায়তা করবে।
  • পানি ও পানিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাতে উৎসাহিত করতে হবে।
  • রোগীর শারীরিক উন্নতির রুটিনমাফিক চেক আপ করাতে হবে।
  • দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার চাপ মোকাবেলা করার জন্য মানসিকভাবে মনোবল জোগাতে হবে।

হেপাটাইটিস বি রোগীর খাবার

যেহেতু হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদী তাই এই রোগের চিকিৎসা চলাকালে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই যা রোগীকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করবে।

  • প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
  • ভাত,রুটি,পাস্তা খাওয়া উপকারী।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন: মসুর ডাল,মটরশুঁটি, বাদাম ইত্যাদি খেতে হবে।
  • কফি বা ক্যাফিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উপকারী কেননা ইহা লিভারের ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার যেমন: অলিভ অয়েল, ক্যানোলা অয়েল এবং ফ্ল্যাক্সসিড অয়েল গ্রহণ।
  • চর্বিযুক্ত মাংস, ডিম, কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার সমূহ এ সময়ের জন্য উপকারী।
  • গ্লুকোজ পানি খাওয়ানো যাবে।

হেপাটাইটিস বি হলে কি খাওয়া উচিত না

যেসমস্ত খাবার এড়িয়ে চলা আবশ্যক –

  • প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপাদান যা লিভার শোষণে ব্যর্থ হবে তা বর্জন করতে হবে।
  • পাউরুটি, পনির এবং সকল ফাস্টফুড বর্জন করতে হবে।
  • হাইড্রোজেনেটেড তেল পরিহার করা আবশ্যক।
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট অথবা ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করতে হবে।
  • অতিরিক্ত লবণ বা সোডিয়ামসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা যাবেনা।
  • অতিরিক্ত আয়রন গ্রহণ করা যাবেনা।
  • অতিরিক্ত চিনসমৃদ্ধ খাবার বর্জন করতে হবে।
  • অ্যালকোহল বা মাদকজাত দ্রব্য গ্রহণ হতে পুরোপুরি বিরত থাকা আবশ্যক।

যেহেতু হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী তাই খাবার রুটিনমাফিক এবং পরিকল্পিতভাবে গ্রহণ করা আবশ্যক।

হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের উপায়

হেপাটাইটিস বি একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ। হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন গ্রহণের দ্বারা এ সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১ বিলিয়ন এ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে যা শিশু, কিশোর এবং বয়স্ক সবার জন্য নিরাপদ।

এছাড়াও যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা হলো-

  • রক্তদানের পর কিংবা কেটে রক্ত বের হলে সেই স্থান ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • ইনজেকশন নেওয়ার সময় সুই শেয়ার করা যাবেনা।
  • ট্যাটু বা সেলাই এর সুঁচ জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে এবং শেয়ার করা যাবেনা।
  • নিরাপদ যৌন অভ্যাস তৈরী করতে হবে এবং কন্ডোম ব্যবহার করতে হবে আক্রান্ত সঙ্গীর সাথে।
  • রেজার,নেইল কাটার,টুথব্রাশ, কানের দুল, নাকের দুল এসব জিনিস শেয়ার করা যাবেনা।
  • ব্যবহৃত স্যানিটারী ন্যাপকিন ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে হবে।
  • অবৈধ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ গ্রহণ করা যাবেনা।
  • উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় নিরাপদ অবস্থা বজায় রেখে চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

Frequently Asked Questions (FAQs)

প্রশ্ন :- হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়?

উত্তর :- জ্বি, হেপাটাইটিস বি হলে বিয়ে করা যায় তবে এক্ষেত্রে দুজনকেই পরীক্ষা করা আবশ্যক। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তাকেও নিয়মানুযায়ী ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।

প্রশ্ন :- হেপাটাইটিস বি কি ভাল হয়?

উত্তর :- হেপাটাইটিস বি একটি ভাইরাস সংক্রমণ যা থেকে পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করা যায়না। চিকিৎসা আজীবন চালিয়ে যেতে হয়।

প্রশ্ন :- হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ?

উত্তর :- নাহ, হেপাটাইটিস বি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা লিভারে সংক্রমণ ঘটায়।

প্রশ্ন :- হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেওয়ার বয়স?

উত্তর :- হেপাটাইটিস বি এর টিকা তিনটি ধাপে নিতে হয়। যার প্রথম ডোজ জন্মগ্রহণের ২৪ ঘন্টার মাঝে দেওয়া ভালো।তবে এসময় না দেওয়া হলে পরবর্তীতে দেওয়া যায়।

প্রশ্ন :- হেপাটাইটিস বি পজিটিভ কি?

উত্তর :- হেপাটাইটিস বি পজিটিভ মানে হচ্ছে পরীক্ষা করা ব্যক্তির শরীরে হেপাটাইটিস বি এর ভাইরাস পাওয়া গেছে। যার অর্থ উক্ত ব্যক্তিটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত।

প্রশ্ন :- হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়?

উত্তর :- জ্বি, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি বিদেশে গমন করতে পারবেন যদি সে দেশের নিয়ম অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমণের টেস্ট সার্টিফিকেট এবং চিকিৎসার বর্তমান পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ আবশ্যক ।

পরিশেষে : HBSAG কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা, HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার,HBSAG লক্ষণ ও প্রতিকার, HBSAG কেন হয়? লক্ষণ ও চিকিৎসা কি?, HBSAG লক্ষণ ও চিকিৎসা

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Leave a Comment