জানা অজানা ড. মুহাম্মদ ইউনূস , দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এর জীবনী

জানা অজানা ড. মুহাম্মদ ইউনূস , দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এর জীবনী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কে?

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে একটি বিশিষ্ট নাম, বিশেষত তিনি ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ তার জীবন ও কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের চাকরিপ্রত্যাশীসহ সব শ্রেণির মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার জীবনী, শিক্ষা জীবন, কর্মজীবন ও অর্জনসমূহের ওপর আলোকপাত করা প্রয়োজন।

জন্ম ও পরিবার

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী দুলা মিয়া সওদাগর একজন জহুরি ছিলেন এবং মাতা সুফিয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দুই ভাই ও নয় বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ছোট ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর ছিলেন একজন জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব। তার সহধর্মিনী ড. আফরোজী ইউনূস, এবং তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে, মনিকা ইউনূস এবং দীনা আফরোজ ইউনূস।

শিক্ষা জীবন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন গ্রামের মহাজন ফকিরের স্কুল থেকে। পরে, তার পরিবার চট্টগ্রাম শহরে চলে আসায় তিনি লামাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাধ্যমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ১৬তম স্থান অর্জন করেন। সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালীন বয়েজ স্কাউটসে যোগ দেন এবং এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন, যেখানে তিনি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা এবং নাটকে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং বিএ ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

স্নাতকের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমে ব্যুরো অব ইকোনমিক্সে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। পরে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন এবং ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরো ও সাজেশন:-

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও নোবেল পুরস্কার

১৯৭৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদান করে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে। তার এই ব্যাংকিং মডেল বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয় এবং গ্রামীণ ব্যাংক মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ করে। এই অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তিনি ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশে জনমত গঠন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি দরিদ্রদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তার সংগ্রাম শুরু করেন এবং ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে দরিদ্র জনগণের জীবনে স্বল্প ঋণের প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পান।

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনা প্রকাশের জন্য বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো:

  • Banker to the Poor: Micro-lending and The Battle Against World Poverty (১৯৯৮)
  • Three Farmers of Jobra (১৯৭৪)
  • Creating a World Without Poverty
  • দারিদ্র্য হীন বিশ্বের অভিমুখে (আত্মজীবনীমূলক)
  • দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের জন্য
  • গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন
  • পথের বাধা সরিয়ে নিন, মানুষকে এগুতে দিন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন ও কর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার গ্রন্থসমূহ ও জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা:

  • প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড (১৯৭৮)
  • রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮৪)
  • স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭)
  • আগা খান অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৯)
  • নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০০৬)
  • মানবহিতৈষণা পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৩)
  • বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৪)
  • আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার (১৯৯৬)
  • সিডনি শান্তি পুরস্কার, অস্ট্রেলিয়া (১৯৯৮)
  • ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, ভারত (১৯৯৮)
  • ওয়ার্ল্ড ফোরাম পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৭)
  • শান্তি মানব পুরস্কার, ইতালি (১৯৯৭)
  • ইতু বিশ্ব তথ্য সংগঠন পুরস্কার, সুইজারল্যান্ড (২০০৬)
  • ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট স্বাধীনতা পুরস্কার, নেদারল্যান্ড (২০০৬)
  • নিক্কেই এশিয়া পুরস্কার, জাপান (২০০৪)
  • প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম, যুক্তরাষ্ট্র (২০০৯)
  • সোলারওয়ার্ল্ড আইন্সটাইন এ্যাওয়ার্ড (২০১০)

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু বিখ্যাত উক্তি:

  • “Poverty does not belong in civilized human society. Its proper place is in a museum. That’s where it will be.”
  • “Once we know where we want to go, getting there will be so much easier.”
  • “If you think creating a world without any poverty is impossible, let’s do it. Because it is the right thing to do.”
  • “We can remove poverty from the surface of the earth only if we can redesign our institutions.”
  • “If we are looking for one single action which will enable the poor to overcome their poverty, I would focus on credit.”

বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন:

  • প্রশ্ন: ড. মুহাম্মদ ইউনূস কত সালে নোবেল পুরস্কার পান?
  • উত্তর: ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
  • প্রশ্ন: ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোন দল করেন? 
  • উত্তর: ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর নাগরিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পরে সে প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে এই তথ্যগুলো আপনার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে।

Leave a Comment