শ্রেণি: আলিম/ HSC/2022 বিষয়: কুরআন মাজিদ এসাইনমেন্টেরের উত্তর 2022 |
---|
এসাইনমেন্টের ক্রমিক নংঃ 02 বিষয় কোডঃ 201 |
এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ সুরা আলমায়িদার আলােকে ইসলামে তৃাহারাত বা পবিত্রতা লাভের উপায়।
শিখনফল/বিষয়বস্তু :
- সুরা আলমায়িদা (আয়াত নং ৬)।
নির্দেশনা :
- ত্বহারাত বা পবিত্রতার সংজ্ঞা
- ত্বহারাত বা পবিত্রতা লাভের উপায়সমূহ
- ওজুর ফরজ ও ওজুর সুন্নাহসমূহ
- ওজুর বিকল্প তায়াম্মুম: ইসলামের একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিধান
- ত্বহারাত বা পবিত্রতার সংজ্ঞা
উত্তর:
ইসলামী জীবন বিধানে মানব জীবনের সকল দিকের উলেখ পাওয়া যায় এজন্য যে, ইসলাম মানবতা ও সভ্যতার ধর্ম। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন, মল-মূত্র ত্যাগের শিষ্টাচার, ভদ্র ব্যবহার, সার্বিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সকল বিষয়ের দিক নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। যাতে একজন মানুষ সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে। কেননা ইসলামের শিক্ষা হলো সভ্যতা, নৈতিকতা ও মানবতাবোধ। সামগ্রিকভাবে দেহ, পোশাক, বাড়িঘর সবকিছু পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখতে বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। দেহে বা পোশাকে অপরিচ্ছন্ন কাউকে দেখলে আপত্তি করতেন।
এক হাদীসে উলেখ রয়েছে, عن ابن المسيب سمع يقول : ” «إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ يُحِبُّ الطِّيبَ ,نَظِيفٌ يُحِبُّ النَّظَافَةَ، َرِيمٌ يُحِبُّ الْكَرَمَ , جَوَّادٌ يُحِبُّ الْجُودَ، فَنَظِّفُوا أراه قال : أَفْنِيَتَكُمْ وَلَا تَشَبَّهُوَا بِالْيَهُودِ وفي رواية تَجْمَعُ الْأَكْبَاءَ فِي دُورِهَا» “( رواه الترمذي ,مشكوة-2/ 516-4487)
“সালিহ ইবন আবূ হাসসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, পবিত্রতা তিনি ভালোবাসেন; তিনি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা তিনি ভালোবাসেন; তিনি দয়ালু, দয়া তিনি ভালোবাসেন; তিনি দানশীল, দানশীলতা তিনি ভালোবাসেন; সুতরাং তোমরা ঘর-বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে, ইয়াহুদীদের মত হয়ো না।’’ -তিরমিযী; মিশকাত-খ.২, পৃ. ৫১৬, হা ঃ ৪৪৮৭
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
আরবী طهارة (ত্বহারাত) শব্দের শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা, নিষ্কলুষতা, ময়লা ও (আবর্জনা) অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় প্রকাশ্য অপবিত্রতা থেকে দেহ, পোষাক, সালাতের স্থান এবং পাপের কালিমা থেকে মন (অন্তর)-কে পবিত্র রাখার নাম ত্বহারাত বা পবিত্রতা।
- ত্বহারাত বা পবিত্রতা লাভের উপায়সমূহ
উত্তর:
পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নিয়ামত। হোক তা আত্মার, শারিরীক কিংবা পরিবেশের। মানুষের উপর আল্লাহর এই নিয়ামত তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন মানুষ সঠিক পন্থায় আত্মা ও শরীর উভয়ের তাহারাত বা পাক-পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশেরও জন্য পূর্ণ জ্ঞান ও হেদায়েত লাভ করতে সক্ষম হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আততুহুরু শাতরুল ঈমান।
অর্থ : পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (সহীহ মুসলিম)
কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবো :
আমরা দুই ভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পারি-
ক. অযুর মাধ্যমে;
খ. গোসলের মাধ্যমে ও
গ. তায়াম্মুমের মাধ্যমে
মানুষ সাধারণত ইবাদত-বন্দেগী তথা নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি করার জন্য সব সময় অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে থাকে। আল্লাহ তাআ’লা বলেন-
ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু- ইজা কুনতুম ইলাস সালাতি ফাগসিলু ওঝুহাকুম ওয়া আইদিয়াকুম ইলাল মারাফেক্বে ওয়ামসাহু বিরুয়্যুসিকুম ওয়ারঝুলাকুম ইলাল কা’বাইন। (সূরা মায়েদা : আয়াত ৬)
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজ পড়ার ইচ্ছা করো, তখন তোমাদের সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করো (কুলি করা, নাকে পানি দেয়া, পুরুষদের দাড়ি খিলাল করা এর অর্ন্তভূক্ত); উভয়হাত কনুইসহ ধৌত করা (দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিন বার করে ধৌত করা অর্ন্তভূক্ত); মাথা মাসেহ করা (কান ও ঘাড় মাসেহ এর অর্ন্তভূক্ত); উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা। এই চারটি হচ্ছে অযুর ফরজ।
জেনে রাখা ভালো, পায়খানা-পেশাবের পর, বমি করার পর, রক্ত-পুজ বের হলে, ঘুমালে, বেহুশ হলে, নামাজে অট্ট হাসি দিলে অযু নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং এর কোনটি ঘটলে আমরা উপরোক্ত নিয়ে অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করবো।
গোসলের মাধ্যমে পাক-পবিত্রতা :
স্ত্রী সহবাস ও স্বপ্ন দোষের কারণে মানুষের উপর গোসল করা অত্যাবশক হয়ে যায়। যতক্ষণ না মানুষ গোসল না করে, শুধু অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন, ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু লা তাক্বরাবুস সালাতা ওয়া আনতুম সুকারা হাত্তা তা’লামু মা তাকুলুনা ওয়া লা ঝুনুবান ইল্লা আ’বিরি সাবিলিন হাত্তা তাগসিলু ওয়া ইন কুনতুম মারদা আও আ’লা সাফারিন আও ঝাআ আহাদুমমিনকুম মিনাল গাইতে আও লা আমাসতুমুন নিসাআ ফালাম তাজিদু মাআন ফাতায়াম্মামু সাই’দান ত্বাইয়্যেবান ফাআমসাহু বিওয়াঝহাকুম ওয়া আইদিয়াকুম ইন্নালল্লাহা কানা আফুয়্যান গাফুরা। (সূরা নিসা : আয়াত ৪৩)
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্থ থাক, তখন তোমরা নামাজের ধারে-কাছেও যেও না, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও, যা কিছু তোমরা বলছ আর (নামাজের কাছে যেও না) গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায়; যতক্ষণ না তোমরা গোসল করে নাও; কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও- তাতে মুখমণ্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআ’লা ক্ষমাশীল।
অতএব আল্লাহর বিধান হচ্ছে- গোসল ফরজ হলে তা গোসলের মাধ্যমেই পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। গোসলের নিয়ম-
ক. কুলি করা;
খ. নাকের নসারন্ধ্রের/নাসিকামূলে পানি টেনে নেয়া;
গ. সমস্ত্র শরীর ভালভাবে ধৌত করা এবং
ঘ. গোসল সমাপ্তির পর গোসলের স্থান থেকে সরে যেয়ে পা ধৌত করা বা গোসলের জায়গা পরিস্কার করে পা ধৌত করা।
সতর্কতা-
গোসলের পূর্বে, যে স্থানে বা কাপড়ে নাজাসাত বা অপবিত্রতা লেগে থাকে তা আগে ভালভাবে ধুয়ে নেয়া। তারপর উপরোল্লিখিত নিয়মে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা।
পানি পাওয়া না গেলে-
১. মুসাফির অবস্থায় ঘুমে অথবা কোনো কারণে গোসল ফরজ হয়ে যায় এবং পানি পাওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করে নিতে হবে। অত্র আয়াতেই বলা হয়েছে যে, তায়াম্মু করেই পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।
২. মসজিদে থাকা অবস্থায় যদি এই সমস্যা হয় এবং গোসলের ব্যবস্থা না থাকে তবে অযুর ব্যবস্থা থাকে তবে অযু করে মসজিদে অবস্থানের ব্যাপারে মতামত পাওয়া যায়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
- ওজুর ফরজ ও ওজুর সুন্নাহসমূহ
উত্তর:
ওযুর রুকন ও ফরয ৬টি:
১। মুখমণ্ডল ধৌত করা। মুখ ও নাক মুখমণ্ডলের অংশ।
২। দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
৩। মাথা মাসেহ করা।
৪। দুই পা টাকনুসহ ধৌত করা।
৫। ওযুর অঙ্গগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
৬। পরম্পরা রক্ষা করা (অর্থাৎ অঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের বিরতি না দেয়া)।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ কর এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]
শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
এখানে ওযুর ফরয দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে– ওযুর রুকনসমূহ।
এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলেমগণের ভিন্নতা রয়েছে। কেউ কেউ ফরযগুলোকে রুকন হিসেবে উল্লেখ করেন। আবার কেউ কেউ রুকনগুলোকে ফরয হিসেবে উল্লেখ করেন।[‘আল-শারহুল মুমতি (১/১৮৩) থেকে সমাপ্ত]
ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, জমহুর আলেম এর নিকট ফরযটাই হচ্ছে– ওয়াজিব।প্রশ্নোত্তর] তাই ওযুর ফরযগুলোই হচ্ছে– ওযুর রুকন ও ওযুর ওয়াজিব; যেগুলো দিয়ে ওযু সংঘটিত হয় এবং যেগুলো ছাড়া ওযুর অস্তিত্ব হতে পারে না।
পক্ষান্তরে ওযুর সময় বিস্মিল্লাহ্ বলা: ইমাম আহমাদের মতে, এটি ওয়াজিব।
দুই:
ওযুর সুন্নতসমূহ অনেক।
শাইখ সালেহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ্) বলেন: ওযুর সুন্নতসমূহ হচ্ছে-
১। মেসওয়াক করা। এর স্থান হচ্ছে- গড়গড়ার সময়। যাতে করে মেসওয়াক ও গড়গড়ার মাধ্যমে মুখ পরিস্কার করা যায়; যার ফলে ইবাদত, তেলাওয়াত ও আল্লাহ্র সাথে গোপন আলাপের জন্য নিজেকে তৈরী করে নেয়া যায়।
২। ওযুর শুরুতে চেহারা ধৌত করার আগে হাতের কব্জিদ্বয় তিনবার ধৌত করা। এ বিষয়টি হাদিসে উদ্ধৃত হওয়ার কারণে এবং যেহেতু হস্তদ্বয় হচ্ছে- ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পানি ব্যবহার করার মাধ্যম।তাই এ দুটোকে ধৌত করার মাঝে সমস্ত ওযুর জন্য সতর্কতা অবলম্বন পাওয়া যায়।
৩। চেহারা ধৌত করার আগে গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়া; অনেক হাদিসে এ দুটো দিয়ে শুরু করার কথা উদ্ধৃত হওয়ার কারণে। রোযাদার না হলে প্রকৃষ্টভাবে এ দুটো আদায় করবে। গড়গড়া কুলি প্রকৃষ্টভাবে আদায় করার অর্থ হল: গোটা মুখের ভেতরে পানি ঘুরানো। প্রকৃষ্টভাবে নাকে পানি দেয়ার অর্থ হচ্ছে: পানি টেনে একেবারে নাকের উপরে তুলে নেয়া।
৪। পানি দিয়ে ঘন দাঁড়ি খিলাল করা; যাতে করে ভেতরে পানি ঢুকে। দুই হাত ও দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
৫। ডান হাত ও ডান পা দিয়ে শুরু করা।
৬। মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয় ও পা-যুগল ধৌত করার ক্ষেত্রে একবারের অধিক তিনবার ধৌত করা।[আল-মুলাখ্খাস আল-ফিকহি (১/৪৪-৪৫) থেকে সমাপ্ত]
সুন্নতের মধ্যে আরও রয়েছে:
ওযুর পরে মুস্তাহাব হচ্ছে: আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত্তা ওয়াবীন ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাতাহ্হিরীন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক। (অর্থ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তাওবা করছি।)
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
- ওজুর বিকল্প তায়াম্মুম: ইসলামের একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিধান
উত্তর:
তায়াম্মুম:
ইসলামের বিধান অনুসারে, তায়াম্মুম (تيمم) হলো ওজু বা গোসলের বিকল্প স্বরূপ বালি, মাটি বা ধূলা দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা।
পবিত্র পানি অলভ্য হলে, কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করে তায়াম্মুম করতে হয়।
তায়াম্মুম (التيمم) অর্থ ‘সংকল্প করা, ইচ্ছা করা’। পারিভাষিক অর্থে- ‘পানি না পাওয়া গেলে ওজু বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহান আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ। যা ইতিপূর্বে কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি।
তায়াম্মুমের কথা পবিত্র কোরআন মাজীদে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন যে,
وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ-
‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো বিপদ সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পাক-পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের ওপর বর্ষণ করতে, যাতে তোমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সূরা: মায়েদাহ , আয়াত ন: ৬)
এবং হাদীসে এসেছে যে, আবু যার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়।’ ( নাসাঈ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৩২৪)
তায়াম্মুমের বিধানের পটভূমি:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম– এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি মূলত তায়াম্মুমের মূল পটভূমি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই তায়াম্মুমের আয়াতটি নাজিল হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূল (সা.) এর সঙ্গে কোনো এক সফরে বেরিয়েছিলাম। যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’ নামক স্থানে পৌছালাম তখন আমার একখানা হার হারিয়ে গেল। রাসূল (সা.) সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লোকেরাও তার সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তারা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবূ বকর (রা.) এর কাছে এসে বললেন- ‘আয়িশা কি করেছে আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূল (সা.) ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তারা পানির নিকটে নেই এবং তাদের সঙ্গেও পানি নেই। আবূ বকর (রা.) আমার নিকট আসলেন, তখন রাসূল (সা.) আমার উরুর ওপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবূ বকর (রা.) বললেনঃ তুমি রাসূল (সা.) ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছো! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। ‘আয়িশা (রা.) বললেন আবূ বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর, আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। রাসূল (সা.) ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তায়ালা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। তারপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন।
উসায়দ ইবনু হুযায়র (রা.) বলেছেনঃ হে আবূ বকরের পরিবার বর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশা (রা,) বলেনঃ তারপর আমি যে উট এ ছিলাম তাকে দাড় করালে দেখি আমার হার খানা তার নীচে পড়ে আছে।’ (বুখারী, ফৎহুল বারী হা/৩৩৪ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, হা/৪৬০৮ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৮৪২ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-২৮)। (৭৮), মায়েদাহ ৫/৬, নিসা ৪/৪৩। (৭৯) . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি মিশকাত হা/৪০২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৮ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০। (৮০), আবুদাঊদ হা/৩৩০, অনুচ্ছেদ-১২৪; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬)
মূলতঃ তায়াম্মুমের হুকুম একটি পুরস্কার- যা এ উম্মতেরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ তায়ালার কতই না অনুগ্রহ যে, তিনি ওজু-গোসল প্রভৃতি পবিত্রতার নিমিত্ত এক বস্তুকে পানির স্থলাভিষিক্ত করে দিয়েছেন, যার প্রাপ্তি পানি অপেক্ষাও সহজ। বলাবাহুল্য, ভূমি ও মাটি সর্বত্রই বিদ্যমান। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, এ সহজ ব্যবস্থাটি একমাত্র উম্মতে মুহাম্মাদীকেই দান করা হয়েছে।
তায়াম্মুমের নিয়ম:
তায়াম্মুমের অনুমতি উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য মহান আল্লাহর এক বিশেষ দান। বস্তুত পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে পানি। যা মহান আল্লাহ তায়ালা পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করে রেখেছেন । তারপরও অবস্থার আলোকে যদি পানি না পাওয়া যায় বা বান্দা অসুস্থ হয়ে পানি ব্যবহারে অপারগ হয়, সে সময় কি করবে।
সেই অবস্থার কথা বর্ননা করে মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও; অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান- যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।’
তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি যথা:
(১) পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা, (২) উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা, এবং (৩) উভয় হাত মাটিতে মেরে তা দিয়ে উভয় কনুই মাসেহ করা।
তায়াম্মুমের সুন্নাত ৭টি যথা:
(১) তায়াম্মুমের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ বলা’, (২) উভয় হাত পাক পাটিতে মেরে সামনের দিকে নেয়া, (৩) তার পর পিছনের দিকে নিয়ে আসা, (৪) হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা, (৫) মাটিতে হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখা, (৬) মাসেহের তারতিব ঠিক রাখা, (৭) বিরতিহীনভাবে তায়াম্মুম করা অর্থাৎ উভয় মাসেহে বিলম্ব না করা।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও
অন্য সকল ক্লাস এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর সমূহ :-
- ভোকেশনাল ও দাখিল (১০ম শ্রেণির) অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- SSC ও দাখিল এসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- HSC ও Alim এসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- Class: 6 To 9 Assignment Answer Link
৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর , ৭ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর,
৮ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর , ৯ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর
বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস// https://www.banglanewsexpress.com/
- ইসলামিক স্টাডিজ ৫ম পত্র সাজেশন ডিগ্রি ৩য় বর্ষ , degree 3rd year islamic studies 5th paper suggestion,ডিগ্রি ৩য় বর্ষ ইসলামিক স্টাডিজ ৫ম পত্র সাজেশন, ডিগ্রী ৩য় বর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ ৫ম পত্র সাজেশন PDF Download
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 politics and citizenship solution (6th week) 2022, class 9 answer 2022 [6th week politics and citizenship solution 2022]
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 bangladesh and world identity solution (6th week) 2022
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 science solution (6th week) 2022, class 9 answer 2022 [6th week science solution 2022]
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 finance and banking solution (6th week) 2022
- মাধ্যমিক ৯ম/নবম শ্রেণির জীববিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২,৯ম শ্রেণির জীববিজ্ঞান ৬ষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২২, class 9 biology solution (6th week) 2022, class 9 answer 2022 [6th week biology solution 2022]