আজকের গ্রন্থ সমালোচনা: BCS গ্রন্থ সমালোচনা কৃষ্ণকান্তের উইল,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা কৃষ্ণকান্তের উইল, কৃষ্ণকান্তের উইল কাব্যের সার্থকতা আলোচনা, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কৃষ্ণকান্তের উইল, কৃষ্ণকান্তের উইল বিসিএস গ্রন্থ সমালোচনা,কৃষ্ণকান্তের উইল
গল্প/উপন্যাস না পড়া থাকলে চরিত্র মনে রাখা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে উপন্যাসের কাহিনি জানলে একসাথে প্রিলি এবং লিখিত গ্রন্থ সমালোচনার জন্য কাজে দিবে।
কৃষ্ণকান্তের উইল
লেখক : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কেন্দ্রীয় চরিত্র: রােহিণী, ভ্রমর ও গােবিন্দলাল।
বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস সম্পূর্ণরূপে আধুনিক কালের সৃষ্টি। ১৮০১ থেকে বাংলা গদ্যের যাত্রা শুরু হলেও বাংলা উপন্যাস সৃষ্টিতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল’ (১৮৫৭) উপন্যাসের আদলে গঠিত হলেও সার্থক উপন্যাসের জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি হয় সার্থক উপন্যাস। তার একটি উল্লেখযােগ্য সামাজিক উপন্যাস হলাে কৃষ্ণকান্তের উইল’ (১৮৭৮)।
উপন্যাসে রোহিনী, গোবিন্দলাল ও ভ্রমরের বিযুক্ত প্রেমের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। স্ত্রীর বর্তমানে বিধবা নারীর প্রতি পুরুষের প্রেমাসক্তির কুফল এ উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য। এ উপন্যাসের সবচেয়ে আলোচিত তথা বাংলা সাহিত্যের এক অমর চরিত্র ‘রোহিনী’।
বাল্যবিধবা রোহিনী রূপবতী, বুদ্ধিমতী ও চঞ্চলা। অন্যদের থেকে রূপে গুণে বেশি হয়েও সে বিধবা হওয়ায় সংসার সুখ থেকে বঞ্চিত। প্রথমেই সে সম্পত্তির উইল চুরি করে কৃষ্ণকান্তের সাথে প্রতারণা করে হরলালকে বিয়ে করার জন্য কিন্তু হরলাল রোহিনীর সাথে প্রতারণা করে। সে বলে- ‘আমি যাই হই, কৃষ্ণকান্ত রায়ের পুত্র, সে (রোহিনী) চুরি করিয়াছে তাহাকে কখনো গৃহিণী করিতে পারিব না।’
আরো ও সাজেশন:-
তারপর রোহিনী প্রেমে পড়ে কৃষ্ণকান্ত রায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র, ভ্রমরের স্বামী গোবিন্দলালের। গোবিন্দলাল করুণাবশত রোহিনীকে চুরির অপরাধে কৃষ্ণকান্তের শাস্তি থেকে বাঁচাতে চায়। আর তখনই রোহিনী গোবিন্দলালকে ভাললাগার কথা বলে ফেলে।
কিন্তু গোবিন্দলাল সাড়া দেয় না। গোবিন্দলালকে না পাওয়ার বেদনা ও ব্যর্থ যৌবনের হাহাকারে সে বার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে বাল্যবিধবা রোহিনীর অসাধারণ রূপ ও সব কাজের দক্ষতা স্ত্রীর ভালবাসায় পরিপূর্ণ থাকা সত্ত্বেও গোবিন্দলালকে আকর্ষণ করে। গোবিন্দলাল রোহিনীর প্রেমে সাড়া দেয়।
উপন্যাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্র গোবিন্দলালের স্ত্রী ভ্রমর । সারা উপন্যাসব্যাপী তার বিস্তার। স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সহজ সরল। যার কাছে স্বামীই সব। তার মতে স্বামীকে অবিশ্বাস করতে নেই, সব ক্ষেত্রেই স্বামীকে অনুসরণ করা স্ত্রীলোকের ধর্ম। ভ্রমর কোন দিন বিশ্বাস করতে পারে নি গোবিন্দলাল রোহিনীকে ভালবাসতে পারে। এটা তার চিন্তারও বাইরে।
কিন্তু গোবিন্দলাল রোহিনীর প্রেমে পড়ে এই ভ্রমরের সাথে প্রতারণা করে। একপর্যায়ে স্ত্রীকে রেখে রোহিনীকে নিয়ে গোবিন্দলাল পালিয়ে যায় এবং তারা যশোরে একা বাস করতে থাকে। তবে গোবিন্দলাল রোহিনীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয় না, কিন্তু তার কাছ থেকে শর্তহীন পতিব্রতা দাবি করে। আবার রোহিনীর সাথে বসবাসের সময় একপর্যায়ে সে ভ্রমরকে ফিরে পেতে চায়। যেভাবে ভ্রমরের সাথে বসবাস করার সময় ঐ রোহিনীকে কামনা করেছিল। মোটকথা গোবিন্দলাল যা চেয়েছে তার মূল্য কখনোই প্রস্তুত থাকে নি ।
অন্যদিকে ভ্রমরের পিতা নিজের কন্যার সংসার ও জীবন বাঁচানোর জন্য রোহিনী গোবিন্দলালকে আলাদা করার কৌশল অবলম্বন করে। সে চক্রান্ত করে নিশাকরের মাধ্যমে একটি ফাঁদ পাতে। রোহিনী নিজের রূপের আকর্ষণ বাঁচাইয়ের মোহে সে ফাঁদে পা দেয়। নিশাকরের সাথে চুপিসারে দেখা করতে এসে গোবিন্দলালের নিকট হাতেনাতে ধরা পরে।
এতে রাগান্বিত গোবিন্দলাল রোহিনীকে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশ গোবিন্দলালকে গ্রেপ্তার করলে গোবিন্দলালের শ্বশুর মিথ্যাস্বাক্ষী সাজিয়ে তাকে মুক্ত করে। দীর্ঘ ৭ বছর পর ফেরত এসে গোবিন্দলাল দেখে স্বামীর শোকে ভ্রমর মৃত্যুপথযাত্রী। কিছুদিন পর ভ্রমর মারা যায়। নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত গোবিন্দলাল পাগলপ্রায় হয়ে গৃহত্যাগ করে। দীর্ঘ ১২ বছর পর আবার এক ঝলক বাড়ি আসে সে। কিন্তু কেউ তাকে প্রথমে চিনতে পারে না। পরে পরিচয় দিলে সবাই যখন তাকে চিনতে পারে তারপরেই সে আবার চিরতরে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। আর কখনও গ্রামে দেখা যায় না তাকে। এ উপন্যাসের কাহিনীতে এটুকু ফুটে উঠে যে এরকম পরিস্থিতিতে পুর্নমিলনের সম্ভাবনা থাকে না। প্রেমের উপাখ্যান সবসময় মিলনে শেষ হয় না, ট্রাজেডিতেও শেষ হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
রোহিনী এ উপন্যাস তথা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম চরিত্র। এ উপন্যাসে লেখক রোহিনীকে কূটিল ও অদম্য সাহসী চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তার কূটিলতা প্রথম ধরা পড়ে যখন সে ভ্রমরের ভুল না ভাঙ্গিয়ে বেদনা আরো বাড়িয়ে দেয়। গোবিন্দলাল রোহিনীকে বহুমূল্য উপহার সামগ্রী প্রদান করেছে- এ মিথ্যা লোকমুখে রটে গেলে রোহিনী ভ্রমরের কাছে গিয়ে সত্য কথা না বলে উল্টো বলে- ‘লোকে যতটা বলে ততটা নহে। লোকে বলে, আমি সাত হাজার টাকার গহনা পাইয়াছি। মোটে তিন হাজার টাকার গহনা আর এই শাড়ি খানা (ধার করা ) পাইয়াছি।’ অদম্য সাহসের ফলে সে বার বার ভুল করে। শেষ ভুলটা করে নিশাকরের প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে।
বঙ্কিমচন্দ্র এ উপন্যাসজুড়ে দেখিয়েছেন খারাপ প্রবৃত্তিগুলোর পরিণাম খারাপই হয়। একই সাথে খারাপের উপর ভালো-র অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। খারাপ প্রবৃত্তির কারণেই ভ্রমরকে রেখে গোবিন্দলাল রোহিনীর দিকে ধাবিত হয়। এর পরিণাম তিনি দেখিয়েছেন গোবিন্দলালের ক্রমাগত অধঃপতন। একই পরিণতি হয় রোহিনীরও।
বঙ্কিমচন্দ্র এ উপন্যাসে রোহিণীকে উনিশ শতকীয় আধুনিকতার ছাঁচে নির্মাণ করার চেষ্টা করলেও সময়, সমকাল আর সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে তাকে উপমহাদেশীয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দ্বিচারিণীর অপবাদ দিয়েছেন। তারপরও রোহিণী সমকালের রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের রীতিনীতির বিরুদ্ধে যে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী এক নারী-চরিত্র তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বলা ভুল হবে না, বাংলা কথাসাহিত্যে বঙ্কিমবাবুই প্রথমবারের মতো নারীর আত্মজৈবনিক ও নিতান্ত ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার নানা দিকের ব্যাখ্যা-বিশেষণ করেছিলেন রোহিণীর মাধ্যমে। এই বিবেচনায় তিনিই বাংলা সাহিত্যে নারীর অন্তর্লোকের গূঢ় রহস্য আবিষ্কারের পথিকৃৎ।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
এ-কথাও সত্য যে, সামাজিক অসঙ্গতির কারণে বঙ্কিমচন্দ্রের পক্ষে রোহিণীর জীবনচেতনাকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করে নেওয়াও সম্ভব ছিল না তৎকালীন বাস্তবতায়।তাই বলে কি বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর নায়িকাকে মেরে ফেলবেন? না তিনি মারেননি, বরং রোহিণী উপন্যাসের ঘটনা-পরম্পরায় নিজেকে এমন এক স্থানে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে ঘটনার অনিবার্য প্রবাহেই তার মৃত্যু ঘটেছে।
উপরন্তু এ-কথা তিক্ত হলেও সত্য যে, রোহিণীর মৃত্যুতে পাঠকের অন্তরে বেদনার বদলে উষ্মা ও উৎকণ্ঠার অবসানে এক ধরনের শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে পাঠক উদ্বিগ্ন হয়েছে ভ্রমনের অকালমৃত্যুতে এবং গোবিন্দলাল সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করায়।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- সোয়াপ (SWAP) কাকে বলে? , সোয়াপ (SWAP) কতো প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করো
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization