আজকের গ্রন্থ সমালোচনা: BCS গ্রন্থ সমালোচনা তেইশ নম্বর তৈলচিত্র,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা তেইশ নম্বর তৈলচিত্র, তেইশ নম্বর তৈলচিত্র কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি তেইশ নম্বর তৈলচিত্র
গ্রন্থ: তেইশ নম্বর তৈলচিত্র
লেখক: আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০০৯)
আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম উপন্যাস ‘তেইশ
নম্বর তৈলচিত্র’(১৯৬০)। প্রথম হলেও এ উপন্যাসেই তাঁর লেখক সত্তা পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়েছে।
একজন চিত্রশিল্পীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এ উপন্যাসের কাহিনী ।
জাহেদ সেই শিল্পী যার শিল্পী হয়ে উঠার গল্পই ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ উপন্যাস। কেন্দ্রীয় চরিত্র চিত্রশিল্পী জাহেদের ‘মাদার আর্থ’ শিরোনামের একটি চিত্র করাচিতে এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে। এ খবর দিয়ে উপন্যাস শুরু হয়েছে।
সেই ছবিটা আঁকার পেছনের গল্পই উপন্যাসের মূল কাহিনী।
গল্পটা আগাগোড়া রোমান্সে মোড়ানো স্মৃতিচারণ। সেই স্মৃতিচারণে আছে বন্ধুত্ব-প্রেম, আছে সমাজের ভয়াল দর্শন। উপন্যাসের ব্যপ্তি চারদিন। চারদিনের মধ্যেই স্মৃতিচারণের মাধ্যমে ধৃত হয়েছে জাহেদের জীবনের কাহিনী।
বর্ণনার ধারাটি সফল হোক আর না হোক উপন্যাসের প্রয়োজন মিটিয়েছে নিঃসন্দেহে। উপন্যাসের কাহিনী এরূপ- জাহেদ আরেক চিত্রশিল্পী জামিলের বাসায় ছবি আঁকার সূত্রধরে যাতায়াত করে। আর এ যাতায়াতের সূত্রে জামিলের ছোটবোন ‘ছবি’র সঙ্গে জাহেদের প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ বিষয়টি জামিল ভালভাবে নেয় নি।
অবশ্য এর কারণও ছিল। জাহেদ ছবির অতীত জীবনের অন্ধকার দিকটা জানে না। জানা সম্ভবও ছিল না। অন্যদিকে জামিলের স্ত্রী মীরার মধ্যস্থতায় ছবি ও জাহেদেরবিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবনের শুরুতেই ঘটে যায় এক বড় ধরনের বিপত্তি। এক রাতে জাহেদ ছবির শরীরে সন্তান জন্মদানের চিহ্ন উদ্ধার করে। ঘটনার বিবরণে জানতে পারে জামিলের এক পরিচিত দুর্বৃত্তের দ্বারা ছবি ধর্ষিত হয়ে অন্তঃসত্তা হয়েছিল। সে সন্তানটি নষ্ট করা হয়েছিল।
এদিকে তাদের বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে ছবি আবার অন্তঃসত্ত্বা হয়।
আরো ও সাজেশন:-
এমতাবস্থায় জাহেদ ছবিকে গ্রহণ করবে না ত্যাগ করবে এই দ্বিধায় পড়ে? দ্বিধান্বিত অস্থির জাহেদ তখন সহশিল্পী মতলবের কথা মনে করে সন্তান মারা যাবার পর মতলুব উন্মাদের মত হয়ে গিয়েছিল। এ কথা মনে করে জাহেদ সিদ্ধান্ত নেয় জীবন কিংবা ভ্রুণের বিনষ্টি নয়, জীবনকে গড়তে হবে। ভাঙা নয়, গড়ার মধ্যেই প্রকৃত সুখ ও জীবনসভার মূল আনন্দ নিহিত। জাহেদ ছবি ও তার সন্তানকে গ্রহণ করে সংসার ধর্ম শুরু করে।
তাদের সম্পর্ক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেও জাহেদ সে বিপর্যয় রুখে
দিয়ে প্রেমকে আরো মহিমন্বিত করেছে তার শিল্পীসত্তার সহায়তায়।
স্ত্রীকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাতদিনের সেই একজিবিশনের চার দিনের মাথায় জাহেদ স্ত্রী বিরহে ব্যাকুল হয়ে ঢাকায় ফিরে আসে। দরজায় কড়া নাড়ার আগেই দরজা খুলে দিয়ে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার স্ত্রী ছবি। এ বর্ণনা দিয়ে উপন্যাস শেষ হয়।
জাহেদ ছাড়াও উপন্যাসে আরো অনেক শিল্পীর কথা উল্লেখ আছে।
যেমন- রায়হান, মুজিদ, আহমেদ প্রমুখ। চিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে শিল্পীদের মিলনমেলার বর্ণনায় এসকল শিল্পীকে পাওয়া যায়। এছাড়া উপন্যাসের কাহিনীতে পাওয়া যায় বিশিষ্ট শিল্পী মুজতবাকে। এভাবে উপন্যাসের ঘটনাবলির কেন্দ্রবিন্দুতে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে শিল্প এবং শিল্পীরা।
কিন্তু নাটকীয়ভাবে কিংবা রহস্যজনকভাবে সেই
শিল্প ও শিল্পীদের নগন্য করে দিয়ে উপন্যাসের বর্ণনায় প্রাধান্য পেয়েছে বস্তুপ্রেম, একজোড়া যুবক যুবতীর প্রেম। তবে কেন্দ্রিয় চরিত্র জাহেদের সঠিক সিদ্ধান্তে এ প্রেম মানবতার মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠেছে।
উপন্যাসে জাহেদের শিল্পী হওয়ার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে ঔপন্যাসিক অনেক প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। নানা মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, ফ্রয়েডিয় যৌনতত্ত্ব, দর্শন, আত্মদ্বন্দ্ব, মূল্যবোধ ইত্যাদির চিত্র গল্পের আড়ালে ফুটে উঠেছে।
এছাড়াও পঞ্চাশের দশকের সমাজচিত্র অঙ্কন, সে সময়ের নর নারীর সম্পর্ক আর অসাধারণ সব শিল্প ভাবনা উপন্যাসটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। উপন্যাসটির ভাষা ব্যবহার ও প্রকৃতি বর্ণনায় লেখক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বর্ণনায় এক ধরণের সরলতা লক্ষ্য করা যায়। পাঠককে চুম্বকের মত আকর্ষণ করারমত তেমন কিছু লক্ষ করা যায় না।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
উপন্যাসে এই নির্লিপ্ততার কারণ লেখক কোন প্রকার ছক ভাঙতে চান নি। উপন্যাসের নায়ক শিল্পী জাহেদ পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অনুশাসনের গণ্ডির মধ্যে থাকতে প্রচন্ড আগ্রহী। লেখকের সচেতন আর অবচেনতার জন্যই হোক উপন্যাসটিতে পুরুষতান্ত্রিকতার ছায়া পড়েছে সর্বত্র। এ উপন্যাসে উপস্থাপিত হয়েছে বাঙালি সমাজের প্রেম নামক শিল্পের বিচ্ছিন্ন বহু চিত্র।
এসব চিত্রের যোগফল উপন্যাসের কাহিনি। প্রথম কাহিনি জোবেদা ও আহাদ মিয়ার। জৌলুস ও বিলাসের লোভে জোবেদা ছেড়ে যায় আহাদ মিয়াকে এবং বিয়ে করে জনৈক খান সাহেবকে। বড় লোকের বউ হওয়ার শখভিত্তিক এ প্রেমের পরিণতি কী তার বর্ণনা রয়েছে এ উপন্যাসে।
উপন্যাসের নায়ক আমাদের সমাজ এবং সমাজের মূল্যবোধ প্রেমের চিত্রগুলোকে কতটা জঘন্য ভাবছে সংশ্লিষ্ট বর্ণনা ও ভাষার তীব্রতা তার প্রমাণ।
উপন্যাসটি একদিকে যেমন জনপ্রিয়, অন্যদিকে তেমনি শিল্প সফল। এতে সমাজবাস্তবতার চিত্রও কোন কোন স্থলে অত্যন্ত সরলভাবে উঁকি দিয়েছে। বস্তুত কাহিনীর বয়ন বিন্যাস, চরিত্র চিত্রণ, প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা ও অন্যান্য অনুষঙ্গ বিবেচনায় ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ একটি বিশিষ্ট ও অনন্য উপন্যাস। উপন্যাসটি বুলগেরীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে ‘পোরেৎ দুবাতসাৎ ত্রি’ শিরোনামে। পরিচালক সুভাষ দত্ত এ উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে ‘বসুন্ধরা’ নামে সিনেমা নির্মাণ করেছেন ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- সোয়াপ (SWAP) কাকে বলে? , সোয়াপ (SWAP) কতো প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করো
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization