আজকের গ্রন্থ সমালোচনা: BCS গ্রন্থ সমালোচনা বিষাদ সিন্ধু,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা বিষাদ সিন্ধু, বিষাদ সিন্ধু কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি বিষাদ সিন্ধু,বিষাদ সিন্ধু বিসিএস গ্রন্থ সমালোচনা,বিষাদ সিন্ধু
গল্প/উপন্যাস না পড়া থাকলে চরিত্র মনে রাখা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে উপন্যাসের কাহিনি জানলে একসাথে প্রিলি এবং লিখিত গ্রন্থ সমালোচনার জন্য কাজে দিবে।
বিষাদ সিন্ধু
লেখক: মীর মশাররফ হোসেন
প্রধান চরিত্র: ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন, এজিদ, সীমার
‘বিষাদ-সিন্ধু’ মূলত একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস।
হিজরী ৬১ সালের মহররম মাসে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রা.)-র ছেলে ইমাম হোসেন (রা.)-এর সঙ্গে উমাইয়া খলিফা মুয়াবিরার পুত্র এজিদের কারবালার প্রান্তরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ইমাম হোসাইনের স্বপরিবারে শাহাদাত বরণের কাহিনিই ‘বিষাদ সিন্ধু’র মূল আলোচ্য বিষয়।
উপন্যাসটি তিন পর্বে বিভক্ত।
মহররম পর্ব (১৮৮৫),
উদ্ধার পর্ব (১৮৮৭) ও
এজিদবধ পর্ব (১৮৯১)।
উপসংহারসহ এতে সর্বমোট ৬৩ টি অধ্যায় রয়েছে।
আরো ও সাজেশন:-
বিষাদ-সিন্ধুর সূচনা হয়েছে- হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এক ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে এবং ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে গ্রন্থের সমাপ্তি ঘটে। এতে একই সাথে মানবজীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা, হিংসা বিদ্বেষ যেমন চিত্রিত হয়েছে, তেমনি ইতিহাসের পটভূমিকায় সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম, রক্তপাত, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে।
মহররম পর্বের (১৮৮৫) বিষয়বস্তু হল ইমাম হাসান (রা.)-এর সঙ্গে ইয়াজিদের দ্বন্দ্ব। ইমাম হাসান (রা.) কে বিষ প্রয়োগে হত্যা এবং ইমাম হোসাইন (রা.) কে কারবালার প্রান্তরে হত্যা করা। এ পর্বের অধিকাংশ ঘটনাই জয়নবকে কেন্দ্র করে। হোসেন ও এজিদের সংঘর্ষের মূল কারণ জয়নব।
জয়নব সতীসাধ্বী ও রূপবতী। তাকে দেখে ইয়াজিদ মুগ্ধ হয় এবং বিয়ে করতে চায়। সে চক্রান্ত করে জয়নবের প্রথম স্বামী আব্দুল জব্বারের সাথে বিচ্ছেদ ঘটায়। কিন্তু জয়নব দ্বিতীয়বার ইমাম হাসানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রণয়ে ব্যর্থ হয়ে এজিদ ক্রোধে ফেটে পড়ে। ইমাম হাসানের অপর স্ত্রী জায়েদাও জয়নবকে হিংসা করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে মুয়াবিয়া (রা.) মারা গেলে ইয়াজিদ ক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু মদীনাবাসী তার আনুগত্য মেনে নিতে অস্বীকার করে। ফলে ইয়াজিদ মারওয়ানকে মদীনা আক্রমণের নির্দেশ দেয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
মারওয়ার পরাজিত হয়ে মায়মুনা নামে এক বৃদ্ধার সাথে ষড়যন্ত্র করে। মায়মুনা ইমাম হাসানের স্ত্রী জায়েদার মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে | ইমাম হাসানকে হত্যা করে। ইমাম হোসাইন এ হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। কুফাবাসীর আমন্ত্রণে ইমাম হোসাইন পরিবারবর্গসহ কুফায় যাত্রা করেন। পথিমধ্যে ইয়াজিদ বাহিনী গতিরোধ করে। অবশেষ ১০ মহররম ইমাম হোসাইন পরিবার একে একে সবাই শাহাদাত বরণ করেন।
উদ্ধার পর্বে (১৮৮৭) আছে কারবালার হত্যাকাণ্ডের পর ইমাম হোসাইন পরিবারের তাঁবুতে ইয়াজিদের সৈন্যরা আক্রমণ করে। ইমাম হোসাইনের মেয়ে সখিনা আত্মহত্যা করেন। সীমার পুরস্কারের লোভে ইমাম হোসাইনের মাথা নিয়ে দামেস্কে যায়। কিন্তু ইয়াজিদের দরবারে গেলে দেখা যায় সেই মাথা ঊর্ধ্বে উঠে যেতে যেতে এক পর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। অপরদিকে দামেস্কে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বৈমাত্রেয় ভাই বীর মুহাম্মদ হানিফার সাথে ইয়াজিদ বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয় । ইমাম জয়নুল আবেদীন বন্দীদশা থেকে পালিয়ে যান।
এজিদবধ পর্বে (১৮৯১) দেখা যায় বীর হানিফার কাছে পরাজিত হয়ে এজিদ পালিয়ে গিয়ে রাজপ্রাসাদের গুপ্তপুরীতে প্রবেশ করে। তাকে ধরতে না পেরে বীর হানিফা অনেক মানুষ হত্যা করে। ফলে দৈব নির্দেশে বীর হানিফা বন্দী হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তিনি সেখানে বন্দী থাকবেন। উপসংহারে ইমাম হোসাইনের বংশধর জয়নুল আবেদীনের সিংহাসন লাভ, হোসাইন পরিবারের মুক্তি এবং মদীনায় প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
‘বিষাদ সিন্ধু’ ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে রচিত বলে এটিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যায়। ঐতিহাসিক উপন্যাস হলেও ইতিহাসের দিক থেকে এতে উল্লেখিত সকল ঘটনা নির্ভরযোগ্য নয়। লেখক মূল ঘটনার ঐতিহাসিক সত্যতা রক্ষা করেছেন কিন্তু ইতিহাসের অন্ধ অনুকরণ করেননি। হাসান হোসেনের সঙ্গে এজিদের বিরোধ রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বপ্রসূত এ কথা ঐতিহাসিক সত্য।
মীর মশাররফ হোসেনের রচনায় এই সংঘাতের মূল কারণ এজিদের জয়নবকে লাভের তীব্র কামনা। সেই রূপতৃষ্ণার উদভ্রান্তকারী শক্তিকে গ্রন্থকার সামাজিক মনের দ্বারা চালিত হয়ে নিন্দা করেন নি। শিল্পীমন দিয়ে সবিস্ময়ে অবলোকন করেছেন। ইতিহাসের সত্যকে মহাকাব্যিক বিশালতায় রূপ দান করার মধ্যে লেখকের শিল্পচেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।
‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র এজিদকে ধরা যায়।
কারণ এজিদের কামনা-বাসনাকে কেন্দ্র করেই এই উপন্যাসের সূচনা এবং শোচনীয় বিপর্যয়ের মাধ্যমেই কাহিনির সমাপ্তি। তার কর্মকাণ্ডকে অবলম্বন করেই এর কাহিনি পল্লবিত হয়েছে।
এ গ্রন্থে জয়নবকে এই মহাট্র্যাজেডির উপলক্ষ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তা জয়নবের স্বগতোক্তিতেই জানা যায়, ‘হায়! আমার নিজ জীবনের আদি অন্ত ঘটনা মনোযোগের সহিত ভাবিয়া প্রত্যক্ষ প্রমাণের সহিত সপ্রমাণ হইবে, এই হতভাগিনীই বিষাদ-সিন্ধুর মূল। জয়নব এই মহা প্রলয়কাণ্ডের এক মর্মান্তিক কারণ।
‘বিষাদ সিন্ধু’ উপন্যাসে পুঁথিসাহিত্যের প্রভাব লক্ষণীয়। তখনকার সময়ে বাঙালি মুসলমান লেখকদের মধ্যে পৃথিসাহিত্যে প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। এসব পুঁথিসাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল অলৌকিকতা। এজন্যই হয়তো লেখক ‘বিষাদসিন্ধু’ গ্রন্থে কিছু অলৌকিক কাহিনীর অবতারণা করেছেন।
এমনকিছু ঘটনার উল্লেখ আছে যেগুলো ইতিহাসের আলোকে বিচার করা চলে না। আবার বাস্তব জীবনেও সে গুলির অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা চলে। যেমন- ‘ চোখের সামনে থেকে হোপনের বাস্তুত শির অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, কারবালার এজিদের প্রান্তরের গাছ থেকে রক্তক্ষরণ, হোসেনের দাফনের সময় তার পিতামাতার মর্তে আগমন প্রভৃতি।
এ প্রসঙ্গে কাজী আব্দুল ওদুদ তাঁর ‘শাশ্বতবঙ্গ’ (১৯৫১) গ্রন্থে বলেছেন, “পুঁথিসাহিত্যের লেখকদের সঙ্গে ‘বিষাদ সিন্ধু’র লেখকের বড় মিল হয়তো এখানে যে, দৈব-বলের অদ্ভুত তত্ত্বে বিশ্বাস তারও ভেতর প্রবল দেখা যাচ্ছে। দৈব-বলে বিশ্বাস মাত্রই সাহিত্যে বা জীবনে দোষাহ নয়, কিন্তু এই বিশ্বাসের সঙ্গে যখন যোগ ঘটে অজ্ঞানের ও ভয়-বিহ্বলতার; তখন তা হয়ে ওঠে জীবনে জন্য অভিশাপ।”
বিষাদ সিন্ধুর রচনারীতির পরিপাট্য, কাহিনির নাটকীয়তা, ঘটনার চমৎকারিত্ব ও চরিত্রচিত্রণের দক্ষতা প্রথম পর্বে যেমন দেদীপ্যমান, পরবর্তী দু-খণ্ডে তেমন নয়। তবে এর ভাষা আগাগোড়াই পুষ্পিত, গতিময় ধ্বনিতরঙ্গবিশিষ্ট। প্রথমে পাঠ্যপুস্তক হিসেবেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে এই জনপ্রিয়তার সূত্রধরে জারিগানের আসরে প্রশ্নোত্তর পর্বে আত্তীকৃত হয়। আধুনিক বাংলা ভাষার গদ্যরীতিতে রচিত মীর মশাররফ হোসেনের লিখিত সাহিত্য বিষাদ-সিন্ধু পুরোটাই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত জারিগানের আদলে আত্তীকৃত হয়েছে।
‘বিষাদ সিন্ধু’ প্রকাশের পরপরই গ্রন্থটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কারবালার ঐতিহাসিক ও মর্মন্তুদ ঘটনা অবতারণা এবং সৃষ্টিশীল গদ্য রচনার জন্য গ্রন্থটি যেমন নন্দিত হয়েছে, তেমনি নিন্দিত হয়েছে ঐতিহাসিক তথ্য অবমাননা ও অলৌকিক কাহিনীর অবতারণার দায়ে। এত দোষ-গুণ থাকার পরও ‘বিষাদসিন্ধু’ বাঙালি স্পর্শকাতর কাহিনি হওয়ায় সাধারণ মুসলিম পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- সোয়াপ (SWAP) কাকে বলে? , সোয়াপ (SWAP) কতো প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করো
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization