আজকের গ্রন্থ সমালোচনা: BCS গ্রন্থ সমালোচনা শেখ মুজিব আমার পিতা,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা শেখ মুজিব আমার পিতা, শেখ মুজিব আমার পিতা কাব্যের সার্থকতা আলোচনা, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি শেখ মুজিব আমার পিতা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ( ১৯৪৭-) স্মৃতিকথামূলক আত্মজৈবনিক রচনা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরাচার নব্য স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় দেড় দশক নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে আন্দোলন করেছেন। তাঁর এ মর্মান্তিক সংঘাতময় জীবনের সাময়িক অবসরে লেখা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত দশটি নির্বাচিত প্রবন্ধের সংকলন ‘শেখ মুজিব আমার পিতা। প্রবন্ধগুলোতে গভীর সংবেদনশীল লেখিকার অন্তর্দৃষ্টি ও সচেতন মন-মানসিকতার পরিচয় মেলে।
স্বৈরশাসন ও সেনাশাসনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আন্দোলন সম্পর্কে পার্থ ঘোষ বলেন- ‘শেখ হাসিনা তৎকালীন শাসক দলের অনৈতিক কাজকর্মের সমালোচনা করবেন বা জনগণের দাবি আদায়ের সমর্থনে প্রচার চালাবেন-সেটাই তো স্বাভাবিক। হাসিনার এই প্রবন্ধগুলোতে তাই তাঁর সেই সময়কার আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বললে অযৌক্তিক হবে না।
“শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে কলকাতার বইমেলায় এবং এটি বাংলাদেশে প্রকাশিত হয় ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সালে। এটি প্রকাশ করেন আগামী প্রকাশনী, প্রচ্ছদ করেন মাসুম রহমান, পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১১ এবং মূল্য ২৫০ টাকা।
স্বাধীনতা মহাকাব্যের মহানায়ক, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। কিন্তু “শেখ মুজিব আমার পিতা” গ্রন্থে যেভাবে নির্মম বাস্তবতা উঠে এসেছে তা অন্য কোনো গ্রন্থে এতো তীব্রভাবে প্রকাশ পায়নি ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা মোট দশটি প্রবন্ধ এ বইটিতে চারটি ভাগে সন্নিবেশ করা হয়েছে এবং এ গুলোর শিরোনাম হলো- বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও পারিবারিক কথা, স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব এবং ছেঁড়া ছেঁড়া ছবি। প্রথম তিনটি ভাগে আছে তিনটি। করে প্রবন্ধ এবং শেষেরটিতে আছে একটি।
গ্রন্থটিতে অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধগুলো ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে লেখা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে যে বছরগুলো বারে বারে পরিবর্তনের ঢেউ অশান্ত করে তুলেছিল, সেই সময়কার আলোকে শেখ হাসিনা গ্রন্থের প্রবন্ধগুলো রচনা করেন। গ্রন্থগুলোর প্রেক্ষাপট মূলত ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল এর মধ্যে বাংলার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার বাস্তব সত্যনিষ্ঠ বিবরণ। এ প্রসঙ্গে ড. রফিকুল ইসলাম বলেছেন-
*সংকলনের প্রতিপাদ্য সংঘাতময় দেশকালের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধাবলিতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি। “শেখ মুজিব আমার পিতা” প্রবন্ধে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে তার হত্যাকাণ্ডসহ নানা অজানা তথ্য। শেখ হাসিনা শুধু বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে নয়, রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গী হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। জাতির পিতার অনেক অজানা অভেয় দিক তিনি এ প্রবন্ধে উন্মোচন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রাণ যে সর্বদা বাংলার মানুষের জন্য নিবেদিত তা মুজিবের শৈশবের মানবতাবাদী রূপই প্রমাণ করে। শেখ হাসিনা বলেন-
আরো ও সাজেশন:-
“আব্বার জন্য মাসে কয়েকটা হাতা কিনতে হতো। কোন ছেলে গরীব, ছাতা কিনতে পারে না।… তাদের ছাতা দিয়ে আসতেন। এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন।
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর যে দুটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে, তা নিয়ে রচিত ‘বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সেনাবাহিনী’ প্রবন্ধের সত্য আরো নির্মম কঠিন ও বাস্তব। যে সেনাবাহিনী নিয়ে জাতির পিতা গর্ব করতেন, সেই সেনাবাহিনীর হাতে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়। শেখ হাসিনা বেদনার্ত কন্ঠে বলেন- ‘বাস্তব কি নির্মম! জাতির জনকের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত তাঁরই প্রিয় সেনাবাহিনী।
তবে তিনি সমগ্র সেনাবাহিনীর উপর এর দায় না চাপিয়ে বলেন- ‘আমি বিশ্বাস করি সমগ্র সেনাবাহিনী এই হত্যাকানো সাথে জড়িত নয়। “ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড’ প্রবন্ধে ৭৫ সালের জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা ফুটে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন- ‘ঘাতকের দল হত্যা করল স্বাধীনতার প্রাণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।…
আর সব শেষে হত্যা করল শেখ রাসেলকে যার বয়স মাত্র দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তিনি দীর্ঘ সময় আন্দোলন করে গেছেন। প্রবন্ধের শেষে বলেন- ‘জাতীয় শোক দিবসে প্রতিটি বাঙালিকে শপথ নিতে হবে যে, বাংলার মাটি থেকে সামরিক শাসনের অবসান। ঘটাব। জনতার আদালতে খুনিদের বিচার করব। ষড়যন্ত্রকারীদের মূলোৎপাটন করে বাংলার মানুষদের বাচাবো ‘স্মৃতির দখিন দুয়ার প্রবন্ধে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ ও মুজিব পরিবারের দিনাতিপাত। মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘোষণার বিষয়ে লেখক বলেন- * ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ।
গুলির আঘাতে ঝাঝরা হয়েছিল এই বাড়িটি। রাত ১২.৩০ মিনিটে আব্বা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বার নির্দেশ দিলেন। … রাত ১.৩০ মিনিটে তারা আব্বাকে গ্রেফতার করে নিয়ে ान।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে যখন রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করছে, ঠিক সে মুহূর্তে শেখ হাসিনা পরিবারসহ বন্দি ছিলেন ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে। চারিদিক থেকে যখন ভেসে আসছে মুক্তির স্লোগান, তখন তাদের দিন কাটছে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের সাথে সাথেই বেগম মুজিব বেরিয়ে আসেন। শেখ ‘হাসিনা বলেন-
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
*মা সঙ্গে সঙ্গে আবদুলকে হুকুম দিলেন পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ফেলতে। … তারপর ছিড়ে টুকরো টুকরো করে আগুন ধরিয়ে দিলেন। “স্মৃতি বড় মধুর, স্মৃতি বড় বেদনা’ প্রবন্ধে বেগম মুজিবের চরিত্রের নানা গুণের সমাবেশ আমরা প্রত্যক্ষ করি। শেখ হাসিনা লিখেছেন- * আন্দোলনের সময় বা আব্বা বন্দি থাকা অবস্থায় পার্টির কাজকর্মে বা আন্দোলনের খরচের টাকাও যোগাতেন।
অনেক সময় বাজার-হাট বন্ধ করে অথবা নিজের গায়ের গহনা বিক্রি করেও মাকে দেখেছি সংগঠনের জন্য অর্থের যোগান দিতে। “স্মরণ-শ্রদ্ধার্থ’ শিরোনামে সংকলিত ‘বেগম জাহানারা ইমাম” প্রবন্ধে সন্তানহারা জননীর সঙ্গে পিতা-মাতা ও স্বজনহারা নিজের সাদৃশ্য খুঁজেছেন। ‘নূর হোসেন’ প্রবন্ধে তিনি নূর হোসেন চরিত্রের মধ্য দিয়ে নব্বই দশকের স্বৈরাচার আমলের চিত্র তুলে ধরেন। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের প্রতীক শহিদ নূর হোসেনকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেছেন- “তুমি প্রতিবাদের প্রতীক।…
তুমি আজ প্রতিবাদের পোস্টার হয়ে রয়েছ প্রতিটি মুক্তিকামী বাঙ্গালির হৃদয়ে।” শামসুর রাহমানের ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় আসাদের রক্তমাখা শার্ট যেমন প্রাণের সঞ্চার করে। সেই শার্টের সাথে শেখ হাসিনা শহিদ নূর হোসেনকে তুলনা করে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। “একানব্বইয়ের ডায়েরি যেন কতগুলো ছেঁড়া ছেঁড়া ছবির কোলাজ। এখানে ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী সাইক্লোন, বঙ্গবন্ধু ও তার রাজনৈতিক সংগ্রাম ও লড়াইয়ের চিত্র তুলে ধরেছেন।
“শেখ মুজিব আমার পিতা” গ্রন্থের বিষয় ও প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ইতিহাসনিষ্ঠ ইতিহাসবেত্তাদের সাহিত্যকর্মে পাওয়া যায়। এ গ্রন্থের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বাস্তবনিষ্ঠ ইতিহাসের সত্যতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, প্রচলিত ভ্রান্ত মতবাদের সত্যরূপ। গ্রন্থে লেখকের অন্তদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা পাঠককে মুগ্ধ করে। গ্রন্থটি পাঠককে একদিকে যেমন দাঁড় করিয়েছে বাস্তবের কঠিন সত্যের মুখোমুখি, তেমনই এর বর্ণিত চিত্রকল্প ও ঘটনার বিবরণী পাঠককে দেয় মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবময় সময়ের দৃশ্য ও বাঙালির আত্মত্যাগের ইতিহাস।
“শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থে শেখ হাসিনা (স্নাতকোত্তর, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) তুলনামূলকভাবে বেশ কাব্যিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ছোট ছোট বাক্যে সাজিয়ে তুলেছেন জীবনের প্রতিচ্ছবি। এ স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের ভাষা ও উপস্থাপনা কৌশল একজন দক্ষ সাহিত্যিকের মতো করেই রূপদান করেছেন। সুফিয়া কামালের ‘একাত্তরের ডায়েরী” গ্রন্থের মতো মাঝে মাঝে আবেগী ও আশাবাদী মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। ‘স্মৃতির দখিন দুয়ার’ প্রবন্ধে শৈশবের সাম বর্ণনা করে আশাবাদ ব্যক্ত করেন-
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
“আমার জীবনের শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গিপাড়ায় স্থায়ীভাবে কাটাতে চাই। খুব ইচ্ছে আছে নদীর ধারে একটা ঘর তৈরি করার। প্রকৃতির রূপ বর্ণনায় লেখক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন-
*আমার আব্বার শৈশব কেটেছিল টুঙ্গিপাড়ার নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে দিয়ে মেঠো পথের ধুলোবালি মেঘে। বর্ষার কাদাপানিতে ভিজে। কোথায় দোয়ে পাখির বাসা দোয়েল পাখির সুমধুর সুর আমার আব্বাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করত।
চিত্রকল্প রচনায় তিনি প্রাজ। তিনি লিখেছেন-
‘বাইগার নদী এখন টুঙ্গিপাড়া আমের পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলেছে। রোদ ছড়ালে বা জ্যোত্স্না করলে সে নদীর পানি রুপোর মতো ঝিকমিক করে।’
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনার দৃষ্টিতে বলা যায় “শেখ মুজিব আমার পিতা’ গ্রন্থ ১৯৭৫ থেকে ৯৫ সালের বাংলাদেশের অনেক উত্থান-পতন, রাজনৈতিক ও সামরিক কু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রকৃত বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের জ্বলন্ত দলিল। এ গ্রন্থের মাধ্যমে ব্যক্তি শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের যেমন পরিচয় পাওয়া যায় তেমনি ইতিহাস বিকৃতি থেকে পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষা পাবে সে পথও তৈরি হয়, যা রাজনৈতিক সাহিত্যের ইতিহাসের অনন্য সংযোজন হিসেবে পরিগণিত হবে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- লিভারেজ ইজারার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ
- এসি কারেন্ট ও ডিসি কারেন্ট