অ্যাসাইনমেন্ট : মদিনার সনদ পৃথিবীর প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র : একটি পর্যালােচনা।
শিখনফল/বিষয়বস্তু :
- প্রথম পরিচ্ছেদ: মদিনার অধিবাসী ও সনদ
নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি):
- মদিনার অধিবাসী ও মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রাথমিক কার্যাবলি
- মদিনার সনদের প্রয়ােজনীয়তা
- মদিনার সনদের গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ
- মদিনার সনদের গুরুত্বপূর্ণ
এসাইনমেন্ট সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন আপনার মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com
- মদিনার অধিবাসী ও মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রাথমিক কার্যাবলি
মদীনার সনদ হচ্ছে পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র বা সংবিধান। এটিকে একটি রাষ্ট্রীয় সংবিধানও বলা যায়। এটি প্রণয়ন করেছেন হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। এই সনদে মােট ৫৩ টি ধারা ছিল। হযরত মুহাম্মদ (স) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন তখন তিনি মদীনার রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মনােনীত হন।
তাই মদিনাকে পরিচালনা করার জন্য এই ৫৩ টি ধারা প্রণয়ন করেন তাই একে মদিনার সনদ বলা হয়। পৃথিবীতে এরপূর্বে কোন রাষ্ট্রনায়ক বা রাজা তার রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য এরকম লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন নি। তাই এটাই হচ্ছে পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান।
• মদিনার অধিবাসী ও মদিনায় হজরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রাথমিক কার্যাবলি: মদিনাকে আল মদিনা আল নববীইয়া বা নবীর শহর’ ও বলা হয়ে থাকে।
এটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র শহর যেখানে মুসলমানদের শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর রওযা। এইটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ মুহাম্মাদ(সাঃ) হিজরতের পরে মদিনায় বসবাস করেছেন। নানা ঐতিহাসিক কারণে মদিনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও পবিত্র এই নগরীটি। মহানবী (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত পরবর্তী মদিনায় পাঁচ শ্রেণির অধিবাসীর উপস্থিতি ছিল। যথা
১. মুহাজিরিন-আল্লাহর হুকুমে মহানবীর সাথে যারা মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেছিলেন তারাই মুহাজিরিন।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
২.আনসার-আনসার একটি ইসলামী পরিভাষা যা দ্বারা হিজরতের পর মুহাম্মদ ও মুহাজিরিনদের সাহায্য করা মদিনার মুসলিমদের বােঝানাে হয়।
৩.ইহুদি -ইহুদি মূলত একটি জাতি বা ধর্মীয় জনগােষ্ঠী যারা ইস্রায়েল জাতির অন্তর্গত এবং জাতিগতভাবে ইহুদি ধর্মের অনুসারী।মদিনায় ইহুদিদের বসবাস অনেক আগে থেকেই ছিল।
৪.খ্রিস্টান -খ্রিষ্টান বলতে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বােঝায়।মদিনার অধিবাসীদের মধ্যে একটি বৃহৎ অংশ ছিল খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী।
৫. মুশরিক-যে ব্যক্তি বা গােষ্ঠি বা গােত্র অথবা জাতি,সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মহান আল্লাহকে ব্যতি রেখে অন্য উপাস্য কামনা করে, অথবা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে তখন তাকে মুশরিক বলা হয়।মদিনায় মুশরিকদেরও বসবাস ছিল চোখে পরার মতাে।
মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাথমিক কার্যাবলি – হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার মুশরিকদের অত্যাচার, অতঃপর আল্লাহ তালার নির্দেশে মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন।তার এই হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
তিনি মদিনায় পৌছালে মদিনার আনসাররা তাকে পেয়ে আনন্দে ভাসে। মুহাম্মদ( সাঃ) মদিনায় মসজিদে নববী নামে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মান করেন।এই নির্মান কাজে তিনি অন্যান্য মুসলমানদের সাথে কাজ করেন।মসজিদে নববীতেই তিনি সপরিবারে বসবাস করতেন এছাড়াও ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলিও তিনি এখান থেকে পরিচালনা করতেন।
মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের প্রাক্কালে মদিনার সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা ছিল চরম শােচনীয়। অথচ তিনি মদিনায় পৌছানাের পর তার আচার আচরণ এবং ইসলামের দ্বীপ্তির দ্বারা মানুষকে পরিবর্তন করতে শুরু করলেন।তৈরী করলেন মসজিদে নববী যাতে মুসলমানদের মধ্যকার ভীত আরও মজবুত হয় ইসলাম প্রচারকে যেন আরও বেগবান করা যায়।
মুসলমানরা মসজিদে নববীতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার জন্য উপস্থিত হতাে। এতে মুসলমানদের মধ্যে একতা, আন্তরিকতা, ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে।
- মদিনার সনদের প্রয়ােজনীয়তা
মদিনা সনদের প্রযােজনীয়তা: (যেকোনাে ৪টি লিখবে) নানা কারণে হজরত মােহাম্মদের (স.) মদিনা সনদের প্রয়ােজনীয়তা দেখা হয়।
১। বিশেষ করে এই সাম্প্রদায়িক হানাহানির বিশ্বে শান্তির খুব বেশি প্রয়ােজন। শান্তির জন্য নানা চুক্তি, সমঝােতা হচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাও গড়ে ওঠেছে। কিন্তু শান্তির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আর তা-ই মদিনা সনদের প্রয়ােজনীয়তা বারবার ওঠে। আসে।
২। এই সনদের মাধ্যমেই মহানবী (সা.) ধর্ম, বর্ণ, জাতি, উপজাতি- নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি যে রাষ্ট্রব্যবস্থার কান্ডারি ছিলেন, সেই রাষ্ট্রে সব মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক। তিনি সবার সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। এই সনদে মদিনাবাসী ইহুদি, খ্রিস্টান, মাজুসি, অগ্নি উপাসক অর্থাৎ সনদে স্বাক্ষরিত সব সম্প্রদায় উম্মাভুক্ত বলে ঘােষণা করা হয়।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৩। এই সনদে মদিনা রাষ্ট্রের সবার জন্য ন্যায্য আইন প্রচলন করা হয়। মুসলিমরা। অন্যায় করলে তাদের জন্য যেমন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল, তেমনি অন্য ধর্মের অনুসারীরাও যদি অপরাধ করতেন, তাদের জন্যও সাজা পাওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এতে সবার জন্য সমান আইন প্রতিষ্ঠা পায়।
৪। এই চুক্তি উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, গােত্রীয় দম্ভ, ধর্মবিদ্বেষ, অঞ্চলপ্রীতি, দেব-দেবীর নামে কর্তৃত্ব মূলত মানবতার শত্রু ও প্রগতির অন্তরায় সব রকম প্রয়াস খতম করে সাফল্যের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ ও দায়িত্ব কর্তব্যের বিবরণ সংবলিত এক অনন্য দলিল। এই দলিল পর্যালােচনা করলে মহানবী (স.)-এর মানবাধিকার ঘােষণার প্রকৃষ্ট পরিচয় প্রতিফলিত।
৫। কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা, বন্ধুর দুষ্কর্ম, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ, নাগরিকের অধিকার, আশ্রয়দানকারী ও আশ্রিতের সম্পর্ক, নারীর আশ্রয়, সনদের স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিলে করণীয়, কুরাইশদের ব্যাপারে ব্যবস্থা, মদিনার ওপর অতর্কিত আক্রমণ হলে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ের সুরাহা হয়।
- মদিনার সনদের গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ
এর প্রথম ১০ ধারায় বলা হয় যে, মুহাজির (দেশত্যাগী বা যারা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল), বানু আউফ, বানু সাঈদা, বানু হারিস, বানু জুশাম, বানু নাজ্জার, বানু আমর, বানু নাবিত ও বানু আউস পূর্বহারে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মনীতি এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পণের মাধ্যমে বন্দীদের মুক্ত করবে। ১১ থেকে ২০ ধারায় মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কিত আইন বিধৃত হয়। ২১ থেকে ২৬ ধারায় হত্যাকারীর শাস্তি, কোনো মুসলমান কোনো অন্যায়কারীকে আশ্রয় দিলে তার শাস্তি, কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসা পদ্ধতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ক আইন সন্নিবেশিত হয়। ২৭ থেকে ৩৬ ধারায় সন্নিবেশিত হয় বিভিন্ন গোত্রের স্বরূপ সম্পর্কিত বিধান।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
পরবর্তী ধারাসমূহে যুদ্ধনীতি, নাগরিকদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, নিজ নিজ ব্যয় নির্বাহ, এ সনদে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা, বন্ধুর দুষ্কর্ম, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ, নাগরিকের অধিকার, আশ্রয়দানকারী ও আশ্রিতের সম্পর্ক, নারীর আশ্রয়, সনদের স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিলে করণীয়, কুরাইশদের ব্যাপারে ব্যবস্থা, মদিনার উপর অতর্কিত আক্রমণ হলে করণীয় ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই প্রথম লিখিত চুক্তি ও সংবিধান। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টির মতে-” Out of the religious community of all Madinah the later and largest state of Islam arose” অর্থাৎ মদিনা প্রজাতন্ত্রই পরবর্তীকালে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূল স্থাপন করে। উক্ত সংবিধানে সকল পক্ষ মেনে নিয়ে স্বাক্ষর দান করেছিল। এই সনদে মদিনাকে একটি হারাম (حرم, “পবিত্র ভূমি”) স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যেখানে কোনো অস্ত্র বহন করা যাবেনা এবং কোনো প্রকার রক্তপাত ঘটানো যাবেনা।
১৩: আইন ও সুবিচারের সমতা সকল গোত্রের জন্য প্রযোজ্য
সকল গোত্রকে বন্দীমুক্তি দেবার অধিকার দেয়ার মাধ্যমে বিশ্বাসীদের প্রতি আইনের সমতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা হলো।
১৪: আইনে শিথিলতা নিষিদ্ধ
বিশ্বাসীরা নিজেদের মাঝে কোন ঋণগ্রস্ত রাখবে না, সাধ্যমত তাকে মুক্তিপণ পরিশোধ করতে সহায়তা করবে।
১৫: অন্যায় পক্ষপাত নিষিদ্ধ
কোন বিশ্বাসী অন্য কোন বিশ্বাসীর সাথে তার মতামত না নিয়ে কোন এলায়েন্স করবে না।
১৬: অবিচার, নিষ্ঠুরতা এবং আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ
মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিরোধিতাকারী বা জোরপূর্বক কোন কিছু জবরদখল করার চেষ্টারত বা বিশ্বাসীদের মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী — এদের বিরুদ্ধে সকল বিশ্বাসী একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, যদি সেই বিপ্লবী বা বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী তাদের কারো সন্তানও হয়ে থাকে।
১৭: একজন মুসলিম কর্তৃক আরেকজন মুসলিম হত্যা করা নিষিদ্ধ
একজন অবিশ্বাসীর জন্য কোন মুসলিম অপর কোন মুসলিমকে হত্যা করবে না, এমনকি কোন বিশ্বাসীর বিরুদ্ধে কোন অবিশ্বাসীকে সাহায্যও করবে না।
১৮: সকল মুসলিমের জন্য জানের নিরাপত্তার সমঅধিকারের নিশ্চয়তা
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
আল্লাহ কর্তৃক সবার নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।এই সংবিধান সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, এর জন্যে সকল বিশ্বাসীকে সর্বোচ্চপরিমাণে বিনয়ী হতে হবে (সকল বিশ্বাসীর জন্যই এটা বাধ্যতামূলক)।
১৯: অন্যান্য সাংবিধানিক কমিউনিটির চেয়ে মুসলিমদের আলাদা সাংবিধানিক পরিচয়
বিশ্বাসীরা একে অপরকে সাহায্য করবে বহির্বিশ্বের বিপরীতে।
২০: অমুসলিম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী (ইহুদী)র জন্যও জীবনের নিরাপত্তার সমান অধিকার
নিশ্চিতকরণ (মুসলিমদের মতো)
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল একজন ইহুদীর জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হলো যে পর্যন্ত না তিনি বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষতিকর কিছু না করেন বা বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বাইরের কাউকে সাহায্য না করেন।
- মদিনার সনদের গুরুত্বপূর্ণ
ইসলাম সব মানুষের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। ইসলাম কখনোই অনর্থক দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে সমর্থন করে না। তাই শান্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের মুসলমান, ইহুদি, পৌত্তলিকসহ নানা ধর্মের ও নানা বর্ণের লোকদের নিয়ে একটি সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
ইতিহাসে এটি মদিনা সনদ নামে পরিচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এ চুক্তির নানামুখী উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি ছিল যুদ্ধের পরিবর্তে পরস্পরের শান্তিপূর্ণ অবস্থান। এ চুক্তির আরও উদ্দেশ্য ছিল অত্যাচারিত-নিপীড়িতকে সাহায্য করা এবং চুক্তিভুক্ত সব পক্ষের মান-মর্যাদা ও ধর্মবিশ্বাসের অধিকার সংরক্ষণ করা। ইসলাম যে শান্তি চায়, তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এই মদিনা সনদ।
‘মদিনা সনদ’ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে বিরাট পরিবর্তন সাধন করে। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নৈরাজ্য, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে যুদ্ধবাজ গোত্রগুলোর মধ্যে সংঘাতের পরিবর্তে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন।
মদিনা সনদে সর্বমোট ৬১টি ধারা-উপধারা রয়েছে। এর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো ছিল এ রকম:
কুরাইশ ও ইয়াসরিবের(মাদিনা) মুমিন মুসলিমরা ও যারা তাদের অনুগামী হয়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং তাদের সঙ্গে মিলে দেশের প্রতিরক্ষা করবে, তাদের মধ্যে তারা অভিন্ন একটি জাতি বলে পরিগণিত হবে। কুরাইশদের মধ্য থেকে যারা মুহাজির, তারা তাদের পূর্বাবস্থায় বহাল থাকবে; তারা মুমিনদের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করবে। বনু আওফ, বনু হারেস (বনু খাযরাজ), বনু সায়েদাহ, বনু জুশাম, বনু নাজ্জার, বনু আমর ইবন আওফ, বনু নাবিত, বনু আওস—সবাই তাদের মধ্যে বিদ্যমান পূর্ব দায় আদায় করবে এবং সব সম্প্রদায় নিজ নিজ পণ স্বেচ্ছায় প্রদান করবে এবং মুমিনদের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করবে।
মুমিনরা তাদের কাউকে দায়গ্রস্ত ফেলে রাখবে না, বরং তাদের মুক্তিপণ বা রক্তপণ স্বেচ্ছাদানে আদায় করে দেবে। কোনো মুমিন অন্য মুমিনের অনুমতি ছাড়া তার বন্ধুর সঙ্গে মিত্রতা করবে না। মুমিন মুত্তাকিদের কারও ওপর কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে অথবা জুলুমের থাবা বিস্তার করতে চাইলে অথবা কোনো অন্যায় বা সীমা লঙ্ঘন করতে চাইলে অথবা মুমিনদের মধ্যে বিপর্যয়-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে সবাই সম্মিলিতভাবে তার প্রতিকার করবে, যদি সে তাদের কারও সন্তানও হয়।
কোনো মুমিন কারও পক্ষ নিয়ে অন্য কাউকে হত্যা করবে না এবং কোনো মুমিনের বিপক্ষে কাউকে সাহায্য করবে না। আল্লাহর নিরাপত্তা জিম্মাদারি সবার জন্য একই সমান, একজন সাধারণ লোকও যে কাউকে নিরাপত্তা আশ্রয় দিতে পারবে। মুমিনরা স্বতন্ত্রভাবে পরস্পরের মিত্র। তবে ইহুদিদের মধ্যে যারা এই চুক্তির অনুগামী হবে, তাদের জন্য সাহায্য ও মর্যাদার অধিকার থাকবে। যুদ্ধ অবস্থায় ইহুদিরাও মুমিনদের সঙ্গে ব্যয়ভার বহন করবে। তাদের প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করা হবে না।
মুমিনদের প্রদত্ত শান্তি ও নিরাপত্তা হবে অভিন্ন, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের সময় এক মুমিনকে ছেড়ে অন্য মুমিন নিরাপত্তা চুক্তি করতে পারবে না, বরং পারস্পরিক সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক চুক্তিই গৃহীত হবে।
রক্তপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে মুমিনরা একে অন্যের পক্ষে তা প্রতিহত করবে। নিশ্চয়ই ধর্মনিষ্ঠ মুমিনরা উত্তম ও সুষ্ঠুতম হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোনো মুমিন, যে এই চুক্তিপত্রে বিদ্যমান বিষয় স্বীকার করে নিয়েছে এবং আল্লাহ ও আখিরাতে ইমান এনেছে, তার জন্য কোনো চুক্তি ভঙ্গকারীকে সাহায্য করা বা আশ্রয় দেওয়া বৈধ নয়। যে এমন কাউকে সাহায্য করবে অথবা আশ্রয় দেবে, তার ওপর রোজ কিয়ামতে আল্লাহর লানত ও ক্রোধ নিপতিত হবে। সেদিন তার কাছ থেকে টাকাপয়সা গ্রহণ করা হবে না।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
আওস গোত্রীয় ইহুদি তাদের মিত্ররা এবং তাদের নিজেদের এই চুক্তিপত্রের পক্ষগুলোর অনুরূপ গণ্য করা হবে। এই চুক্তিপত্রের পক্ষগুলো থেকে তারা বিশ্বস্ত ও কল্যাণকামী আচরণ পাবে। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে, ভঙ্গ করা যাবে না। কেউ কোনো বিরূপ কর্মতৎপরতায় জড়িত হলে তা তার ওপরই বর্তাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ এই চুক্তিপত্রের বিষয়াদির সত্যনিষ্ঠ বাস্তবায়ন ও প্রতিশ্রুতির প্রতিপালনকারীদের সঙ্গে আছেন।
এই সনদ কোনো জালেম বা অপরাধীকে রক্ষা করবে না। মদিনা থেকে যে বাইরে যাবে, সে নিরাপদ এবং যে এর অভ্যন্তরে অবস্থান করবে, সে–ও নিরাপদ। তবে যে জুলুম করবে এবং অপরাধ করবে, সে নয়। যে ব্যক্তি এই চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্য করবেন। এই চুক্তিপত্রের উত্তম হেফাজতকারী ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীর ওপর আল্লাহ (সাক্ষী) আছেন। চুক্তিবদ্ধ পক্ষগুলোর কেউ হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অনুমোদন ছাড়া যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হতে পারবে না। কোনো বিষয়ে যখনই মতানৈক্য হবে, তখন তা আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর সমীপে সোপর্দ করতে হবে।
শান্তির জন্য চাই সত্যনিষ্ঠা ও সংযম। তাই মদিনা সনদের সর্বশেষে লেখা হয়: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) সে ব্যক্তির সাহায্যকারী, যে সত্যনিষ্ঠ ও সংযত।’ (সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম)।
প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ না করে সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া মহানবী (সা.)–এর শান্তিকামিতার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি শান্তি স্থাপনের জন্য হুদাইবিয়ার সন্ধি ছাড়াও আরও বহু সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছেন। বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। তাঁর কাজের মূলনীতিসমূহের প্রথম মূলনীতি ছিল সব ধরনের অশান্তি ও অরাজকতা দূর করা।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল কপিরাইট: (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
এসাইনমেন্ট সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন আপনার মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে YouTube : Like Page ইমেল : assignment@banglanewsexpress.com
- ২০২১ সালের SSC / দাখিলা পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- ২০২১ সালের HSC / আলিম পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- ২০২১ সালের ৯ম/১০ শ্রেণি ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- ২০২১ সালের HSC (বিএম-ভোকে- ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স) ১১শ ও ১২শ শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- ২০২২ সালের ১০ম শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের SSC ও দাখিল এসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- ২০২২ সালের ১১ম -১২ম শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের HSC ও Alim এসাইনমেন্ট উত্তর লিংক
- ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
- ৭ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
- ৮ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক
- ৯ম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ লিংক