বিষয়: জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব
বাংলা রচনাঃ জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব
ভূমিকা : নিজ দেশ ও জন্মভূমির প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসাই স্বদেশপ্রেম। স্বদেশের প্রকৃতি ও ধূলিকণা আমাদের নিকট অতি প্রিয় ও পবিত্র। শিশুকাল থেকেই মানুষ স্বদেশের মাটিতে বেড়ে ওঠে। মায়ের বুক যেমন সন্তানের নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত আশ্রয়, স্বদেশের কোলে মানুষ তেমনি নিরাপদ ও নিশ্চিত আশ্রয় লাভ করে। স্বদেশকে ভালোবাসার মাঝেই মানব জীবনের চরম সার্থকতা নিহিত। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে।
স্বদেশপ্রেম কী : স্বদেশপ্রেম মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ও সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে সেটিই তার জন্মভূমি। জন্মভূমির প্রতি, স্বজাতির প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধাবোধই স্বদেশপ্রেম। দেশপ্রেমীর নিজ দেশের প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা, সীমাহীন আনুগত্য। বিশ্বের উন্নত জাতিগুলো স্বদেশের জন্য আত্মত্যাগ করেই উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছে। স্বদেশপ্রেম না থাকলে দেশ ও জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সুখী দেশ গড়তে হলে তাই নাগরিকদের অবশ্যই স্বদেশপ্রেমী হতে হবে।
স্বদেশপ্রেমের উৎস : প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের দেশকে ভালোবাসে। সকল জীবের মধ্যেই এ গুণ বিদ্যমান। বন্যপশুকে বনভূমি ছেড়ে লোকালয়ে আনলে, পাখিকে নীড়চ্যুত করলে তারা আর্তনাদ শুরু করে। এটি করে নিজ আবাসস্থানের প্রতি ভালোবাসার টানে। নিজ আবাসের প্রতি ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। স্বদেশের মাটি, পানি, আলো, বাতাস যেন আমাদের জীবনেরই অঙ্গ। এগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অঙ্গহানির শামিল। এগুলোর প্রতি মমত্ববোধ থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশপ্রেম। দেশের মাটির প্রতি মমত্ববোধের সাথে মিশে থাকে শ্রদ্ধা, প্রীতি ও গৌরববোধের আকাঙ্ক্ষা।
দেশপ্রেমের অভিব্যক্তি : গর্ভধারিণী জননীকে সন্তান যেমন ভালােবাসে, তেমনি দেশ-মাতৃকাকেও মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে এবং ভালােবাসতে শেখে। দেশ ও দশের প্রতি মানুষের যে বন্ধন ও আকর্ষণ তা থেকেই স্বদেশপ্রেমের জন্ম। দেশ যত ক্ষুদ্র বা যত দরিদ্রই হােক না কেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে তার জন্মভূমি, তার দেশ, সবার সেরা। যে কোনাে ব্যক্তির সকল প্রাপ্তি তার স্বদেশের অবদান বলে স্বদেশের প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে তার ধন, জন, মান, এমনকী জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। দেশ ও জাতির জীবনে যখন সুখ আর ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য তখন মানুষের স্বদেশপ্রেম থাকে গভীর ঘুমঘােরে মগ্ন। দুঃখ, নির্যাতনের আঘাতে আঘাতেই হয় সেই সুপ্তি-মগ্নতার আবরণ উন্মােচন। দেশের যখন সংকটমুহুর্ত, যখন বহিঃশত্রুর উল্লাস-অভিযানে দেশের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত হয়। যখন রক্তচক্ষু বিদেশি শাসকের নির্যাতন চরমে, যখন পরাধীনতার বিষজ্বালায় জর্জরিত মানুষ মুক্তিকামনায় উদ্বেল-অস্থির , যখন দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তােলার প্রয়ােজন হয় তখনই আসে মানুষের স্বদেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রের দীক্ষালগ্ন। তখন দেশাত্মবােধ শ্রেণী, ধর্ম-বর্ণ-গােত্র সব ভুলে একই ভাবচেতনা দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে।
স্বদেশপ্রেম তখন মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। সবাইকে একই চেতনায় একপ্রাণ হয়ে মহৎ লক্ষ্য সাধনে ব্রতী করে। গড়ে ওঠে মানব-সম্প্রীতি। দেশের মর্যাদার জন্যে মানুষ অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেয়। শত শত শহিদের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই হয় দেশপ্রীতির প্রাণ-প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও জাতীয়তাবােধ হল স্বদেশপ্রেমের প্রধান উৎস। কত বীরের আত্মবলিদানে তখন স্বদেশের মৃত্তিকা হয় রক্তে রাঙা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তাে স্বদেশপ্রীতিরই জ্বলন্ত স্বাক্ষর।
স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ : মানুষ সমগ্র বিশ্বের বাসিন্দা হলেও একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সে বেড়ে উঠে। একটি বিশেষ দেশের অধিবাসী হিসেবে সে পরিচয় লাভ করে। এ দেশই তার জন্মভূমি, তার স্বদেশ। মানুষ স্বদেশে জন্মগ্রহণ করে ও স্বদেশের ভালোবাসায় লালিত-পালিত হয়। নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সকল উপাদান সে স্বদেশ থেকে পায়। ফলে স্বদেশের প্রতি প্রবল মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়। এ জন্য মানুষ স্বদেশের গৌরবে গৌরবান্বিত হয় এবং স্বদেশের অপমানে অপমাণিত হয়। স্বদেশের স্বাধীনতা ও মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে। কবি ঈশ্বচন্দ্র গুপ্ত তাই লিখেছেন-
মিছা মনিমুক্তা হেম স্বদেশের প্রিয় প্রেম
তার চেয়ে রত্ন নাই আর।
স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ : স্বদেশপ্রেম মানব হৃদয়ে লালিত হয়। আর স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পায় জাতীয় জীবনের দুঃসময়ে মানুষের কর্মের মাধ্যমে। স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, স্বদেশের মানুষের কল্যাণ সাধনে মানুষের মনে স্বদেশপ্রেম জেগে ওঠে। যাঁরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন তাদের নাম ও কীর্তি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁদের সে প্রেম ও আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে চিরকাল। স্বদেশের তরে জীবন উৎসর্গকারীরা সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়-
ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।তোমাতে বিশ্বময়ীর তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।
দেশপ্রেমের ভিন্নতর বহিঃপ্রকাশ : কেবল দেশকে ভালোবাসার মধ্যে দেশপ্রেম সীমাবদ্ধ নয়। দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়া যেমন শিল্প সাহিত্য, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতির ক্ষেত্রে অবদান রাখাও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রতি ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গাইতে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন মানুষের একত্রিত হওয়া দেশপ্রেমরই বহিঃপ্রকাশ। দেশের কল্যাণ ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে বিশ্বসভ্যতায় গৌরব বাড়ানো যায়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ড. মুহাম্মদ ইউনুস, সাকিব আল হাসান প্রমুখের গৌরবময় অবদানের জন্য বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। দেশপ্রেমের উজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ আমরা নবী করীম (স.) এর মধ্যে দেখতে পাই, দেশকে ভালোবেসে তিনি বলেছিলেন-
হে মাতৃভূমি তোমার লোকেরা যদি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করত তবে আমি কখনই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম: স্বদেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিশ্বকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। স্বদেশপ্রেম কখনও বিশ্বপ্রেমের বাধা হয় না। দেশপ্রেম যদি বিশ্ববন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সহায়ক না হয় তবে তা প্রকৃত দেশপ্রেম হতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই দেশপ্রেমের চেতনায় উৎসাহিত হতে হবে। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে না সে অন্য দেশ, ভাষা, গোষ্ঠী তথা মানুষকে ভালোবাসতে পারবে না। তাই দেশপ্রেমের মধ্যেই বিশ্বপ্রেমের প্রকাশ ঘটে
দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে সম্পর্ক : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মতে, জাতীয়তা ও স্বদেশপ্রেম যখন সঙ্কীর্ণতার অন্ধকূপে বন্দি হয়ে উগ্র ছিন্নমস্ত রূপ ধারণ করে, তখন বিশ্বপ্রেম পদদলিত হয়। স্বদেশকে একমাত্র পরম প্রিয় মনে করে আমরা বিশ্বকে শত্রু মনে করি এবং তাকে ধ্বংস করবার জন্য ধাবিত হই। তখন শুভ বিচার-বুদ্ধি স্বদেশপ্রেমের অন্ধ আবেগে লুপ্ত হয়। ফলে পরপর হানাহানি এবং অবারিত রক্তক্ষয় অনিবার্যরূপে দেখা দেয়। আর, নানা মারণাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে সেই হানাহানি অচিরেই ধারণ করে বিভীষিকাময় রূপ।
সাহিত্যের আয়নায় দেশপ্রেম : বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক তাদের কবিতা, কাব্য, নাটক, গান, উপন্যাস প্রভৃতি লেখনির মাধ্যমে তাদের দেশপ্রেমকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আধুনিক যুগে বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেমের বিকাশ ঘটে ব্রিটিশ আমল থেকেই। নীলদর্পণ, আনন্দমঠ, মেঘনাদ বধ প্রভৃতি গ্রন্থে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে। এছাড়া নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখের সাহিত্যে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে।
ছাত্রজীবনে স্বদেশ প্রেমের শিক্ষা : স্বদেশপ্রেম মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলেও এ গুণটি তাকে অর্জন করতে হয়। তাই ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেমের দীক্ষা গ্রহণ করতে হয়। দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে। ছাত্রজীবনে যে দেশপ্রেম মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় তা মনে আজন্ম লালিত হয়। আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে দেশের ভালো-মন্দ তাদের উপর অর্পিত হবে। সবার আগে দেশের বিপদে-আপদে ও প্রয়োজনে ছাত্রদেরকেই এগিয়ে আসেত হবে। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে ছাত্রদেরকে জীবন উৎসর্গ করতে হবে। যেমনটি ছাত্ররা করেছিল ১৯৫২ সালের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে।
স্বদেশপ্রেমের উপায় :
স্বদেশের উপকারে নাই যার মন
কে বলে মানুষ তারে পশু সে জন।
পবিত্র ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।” পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই, যে ধর্মে দেশকে ভালবাসার নির্দেশ দেয়া হয় নি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সবচেয়ে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকই নিজ নিজ কর্মের সীমারেখায় স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দেয়। স্বীয় দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত। জাতির জন্য দেশের জন্য প্রত্যেক মানুষের, তা সে ছােটই হােক কি বড়ই হােক-তার কিছু না কিছু করার আছে। জাতির জন্য যদি কিছু অবদান রাখা যায় তবে তাতে দেশপ্রেমের নিদর্শন থাকে। তবে উগ্র স্বদেশপ্রেম মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর। অন্ধ স্বদেশপ্রেম মানুষকে সংকীর্ণ করে জাতিতে জাতিতে বিরােধের সৃষ্টি করে এবং মানুষের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে। অপরদিকে মানবিকতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক মহামানব বিশ্ববরেণ্য হয়েছেন। তাদের স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমে রূপান্তরিত হয়েছে।
স্বদেশপ্রেমের প্রভাব : স্বদেশেপ্রেমের মহৎ চেতনায় মানব চরিত্রের সৎ গুণাবলি বিকশিত হয়। মানুষের মন থেকে সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতা দূর হয়। স্বদেশপ্রেম মানুষকে উদার ও মহৎ করে, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করতে প্রেরণা দেয়। স্বদেশপ্রেমের কারণেই মানুষ আত্মসুখ ত্যাগ করে দেশ ও জাতির কল্যাণ করে, দেশবাসীকে ভালোবাসো।
স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত : যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী স্বদেশের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নাম না জানা লক্ষ লক্ষ শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য জীবন দিয়ে অমর হয়েছেন। বিশ্ব অঙ্গনে দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত রেখেছেন চীনের মাওসেতুং, রাশিয়ার লেলিন ও স্ট্যালিন, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন প্রমুখ ব্যক্তি। দেশেপ্রেমের জন্যেই তাদের সকলের নাম বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
দেশপ্রেম ও রাজনীতি : বস্তুত রাজনীতিবিদদের প্রথম ও প্রধান শর্তই হল দেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেমের পবিত্র বেদিমূলেই রাজনীতির পাঠ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদ দেশের সদাজাগ্রত প্রহরী। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদদের চেহারা ভিন্ন। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই মহত্তর, বহত্তর কল্যাণবােধ থেকে ভ্রষ্ট। ব্যক্তিক ও দলীয় স্বার্থচিন্তাই অনেক ক্ষেত্রে প্রবল। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, মানুষের প্রয়ােজনে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার সাধনা, দেশপ্রেমের অঙ্গীকার ও সার্থকতা, তা এখন প্রায়ই অনুপস্থিত।
বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও দেশপ্রেম : নগর কেন্দ্রীক সভ্যতায় মানুষ তার পাশের বাড়ির মানুষের কথাই ভুলে গেছে। মানুষ আজ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। দেশের মানুষের চিন্তা করার মানসিকতা তার নেই। মানুষের মধ্যে বাঁচার তাগিদ আজ আর কেউ অনুভব করে না। কেননা মানুষের মধ্যে বাঁচা মানে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য বাঁচা। কিন্তু সবাই এখন নিজের জন্য বাঁচতে চায়। তাই দেশ ও জাতির জন্য আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
উগ্র দেশপ্রেম : দেশপ্রেম দেশ ও জাতির জন্য গৌরবের। কিন্তু উগ্র দেশপ্রেম ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুটি বিশ্বযুদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদ তথা উগ্র দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। জার্মানির হিটলার ও ইতালির মুসোলিনির উগ্র জাতীয়তা ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাই উগ্র দেশপ্রেম সব সময় অশুভ, চির অকল্যাণকর ও চির অশান্তির।
দেশপ্রেম ও আমাদের কর্তব্য ; পৃথিবীতে বীর, বিপ্লবী, ত্যাগী মহৎ দেশপ্রেমিক মানুষের সংখ্যা কম নয়। দেশে দেশে এই মহৎ দেশপ্রেমিক মানুষেরা তাদের ত্যাগের আদর্শ রেখে গেছেন। তারা এই পৃথিবীকে করতে চেয়েছেন সুন্দর, কল্যাণকর, শান্তিময়। কিন্তু মানুষের এই স্বপ্ন আজো স্বার্থক হয় নি। যে লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে তারা জীবন উৎসর্গ করেন মানুষ সেই ত্যাগ ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনকে আরাে দুঃখময় করে তােলেন। মানুষ জীবন দেয় ঠিকই কিন্তু তার অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ হয় না। আজো পৃথিবীতে হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি, অশান্তি দূর হয় না, মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। তবে কি
‘বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা / তার যতাে মূল্য সেকি ধরার ধুলায় হবে হারা?’
মানুষের সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণ ছাড়া এইসব মহৎ আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ প্রকৃত মর্যাদা পাবে না। আমরা যদি বীর, বিপ্লবী, ত্যাগী দেশপ্রেমিকদের মর্যাদা দিতে চাই তাহলে তাদের কর্ম ও আদর্শকে মূল্য দিতে হবে। তাহলেই তাদের জীবনদান ও দেশপ্রেম সার্থক হবে। আর এটাই হচ্ছে দেশপ্রেমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের শ্রেষ্ঠ উপায়। এটাই হচ্ছে দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।
উপসংহার :
স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাঁচিতে চায়
দাসত্বশৃঙখল বল কে পরিবে পায় হে
কে পরিবে পায়। (রঙ্গলাল)।
জন্মভূমি সকলেরই প্রিয়, তা রক্ষার দায়িত্বও সকলের। তবে মনে রাখতে হবে নিজের দেশকে রক্ষার নামে অপরকে আক্রমণ করা মানবতাবিরোধী। স্বদেশপ্রেমের মতো পবিত্র গুণ আর নেই। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের উচিত স্বদেশকে ভালোবাসা। প্রকৃত দেশপ্রেমী মানুষ সকলের কাছে পরম পূজনীয়। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকারী ব্যক্তিই বিশ্ববরেণ্য। দেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই অংশ বিশেষ। নিজস্বার্থকে ত্যাগ করে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে ভালােবাসাই দেশপ্রেম। আর দেশের উর্ধ্বে সমগ্র পৃথিবীকে ভালােবাসাই বিশ্বপ্রেম। বিশ্বপ্রেমের মধ্য দিয়ে সকলের সঙ্গে উদার ভ্রাতৃত্ব ঘােষণা করে বলতে হবেঃ
সব ঠাই মাের ঘর আছে আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া
দেশে দেশে মাের দেশ আছে আমি সেই দেশ লব জুঝিয়া।
আরো ও সাজেশন:-
বাংলা রচনাঃ জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব (অন্য বই থেকে )
ভূমিকা : স্বদেশ যেকোনো মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। কথায় বলে- ‘মা আর মাতৃভূমি উভয়ের ভালোবাসার মতো এমন পরশ ভালোবাসা আর হয় না।’ সেক্ষেত্রে স্বদেশকে ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের হৃদয়জাত প্রবৃত্তি। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে তার দেশকে ভালোবাসে না। যে স্বদেশকে ভালোবাসে না সে আর যাই হোক ভালো মানুষ হতে পারে না। একটু লক্ষ্য করলে আমরা দেখি, পাখি ভালোবাসে তার আপন নীড়কে, বনের ভয়ানক জানোয়ার তার গহীন বনকে ভালোবাসার টানে ভালোস্থানে রাখলেও সে বনে পালিয়ে যায়। নিজের গৃহের প্রতি অবাধ টান প্রতিটি প্রাণীর ভেতর রয়েছে, রয়েছে ভালোবাসার মতো তীব্র আগ্রহ। মানুষও তার দেশকে ভালোবাসে কারণ প্রতিটি মানুষ যেখানে মানুষ হয়ে ওঠে সে স্থানকে মায়ের পরেই ভালোবাসা তার কর্তব্য হয়ে ওঠে। মা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি প্রতিটি মানুষের দেহে, মনে, প্রাণের সাথে মিশে থাকে। মা আর মাতৃভাষার সাথে মাতৃভূমি মানুষের কাছে সর্বাপেক্ষা গ্রহণীয় ও মূল্যবান সম্পদ। তাই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায় বলা যায়-
‘মিছা মণি মুক্তা হেম
স্বদেশের প্রিয় প্রেম
তার চেয়ে রত্ন নেই আর।’
স্বদেশপ্রেম কী ও কেন : স্বদেশপ্রীতি মানুষের একটি মহৎ ও শ্রেষ্ঠগুণ। নিজ দেশ ও জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, নিগূঢ় শ্রদ্ধাবোধ, বিস্মৃত অনুরাগ, সুতীব্র আকর্ষণ এবং যথার্থ আনুগত্যকে স্বদেশপ্রেম বলে। সত্যিকার অর্থে, স্বদেশের উন্নতিকল্পে ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে সব ত্যাগের সাধনাকেই দেশপ্রেম বলে। দেশপ্রেম মানুষের হৃদয়জাত প্রবৃত্তি। স্বদেশপ্রীতি মানুষের ভেতর জন্ম দেয় মহৎ হওয়ার গুণাবলী। এই গুণাবলী মানুষকে শ্রেষ্ঠ হতে সহায়তা করে। স্বদেশপ্রেম মানুষকে ক্ষুদ্র স্বার্থান্ধ থেকে রক্ষা করে তাকে ব্যাপক ও বৃহত্তের মধ্যে কাজ করার সুযোগ দেয়। এক কথায়, জন্মভূমির প্রতিটি ধূলিকণাকে নিজ দেহের প্রতিটি কোষ মনে করে তাকে ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধাবোধ দেখানোই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। তাই কথায় বলে- ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও প্রিয় বলেই মানুষ জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার্থে জীবনকে অকাতরে বিসর্জন দিতে ভয় পায় না।
স্বদেশপ্রেমের স্বকীয় সৃষ্টি : মানুষ হিসেবে যে কেউ তার স্বদেশ ও স্বজাতিকে অন্য কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবসে। মানুষ যুক্তি নির্ভর জীব বলে স্বদেশের প্রতি তার ভালোবাসা গভীরতর কারণ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। বনের পশুকে স্থানচ্যূত করলে তার অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবশ্যই অবগত হই। পশুপাখির এইধর্মী আচরণকে সংসর্গজাত বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষের স্বদেশপ্রীতি কেবল সংসর্গজাত নয়। জন্ম-জন্মান্তরের বংশানুক্রমিক ধারায় একটি বিশিষ্ট রীতি-নীতি, শিক্ষা, সভ্যতার জাতীয় সমন্বয় থেকে এ ধরনের প্রবৃত্তি উদ্ভূত হয়। আমরা যে দেশে জন্মগ্রহণ করি, সে দেশের অতীত ইতিহাস, তার ঐতিহ্যের ধারা, মানুষের সামাজিকতা, তাদের গোত্রীয় পরিবেশবোধ আমাদের স্নায়ুতে মিশে একাকার হয়ে যায় এবং এ সব সব কিছুই আমাদের আকৃষ্ট করে। এটা বাইরের সংসর্গ নয়, এটা স্বদেশের জন্য, স্বজাতির জন্য একটা নিবিড় শ্রদ্ধা, প্রীতি ও অনুভূতিজাত চৈতন্যবোধ। আর এভাবেই স্বদেশের প্রতি আমাদের স্বকীয় ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ ও তার চেতনা : স্বদেশের স্বরূপ স্বদেশকে প্রাণের মতো ভালোবাসা। দেশের সবকিছুতে নিজেকে উৎসর্গ করার নাম স্বদেশপ্রেমের চেতনা। মা, মাটি আর মানুষকে ভালোবাসার মধ্যে স্বদেশপ্রেমের মূল সত্য নিহিত। ফলে সে দেশের ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতিজীবন ও পরিবেশের সঙ্গে যেমন গড়ে ওঠে তার শেকড়ের বন্ধন, তেমনি মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি সৃষ্টি হয় চিরায়ত গভীর ভালোবাসা। ভালোবাসার এই আবেগময় প্রকাশ মানুষকে স্বজাতি ও স্বদেশের প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। চিন্তায়, কথায়, কাজে স্বদেশের জন্য যে ভালোবাসা প্রকাশ পায় তাইই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম। বিশেষভাবে বলতে গেলে বলতে গেলে বলতে হয়, স্বদেশপ্রেম যেসব বৈশিষ্ট্য দ্বারা উজ্জ্বল সেগুলো হলো- আত্মত্যাগ, বীরত্ব, সরলতা, শর্তহীনতা, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব, কর্তব্য ও একাত্মবোধ। কবির ভাষায় বলা যায়-
‘কিন্তু যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হিত
স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিৎ
জানাও সে নরাধমে জানাও সত্বর
অতীব ঘৃণিত সেই পাষণ্ড বর্বর।’
স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া : স্বদেশপ্রেমের প্রতি ভালোবাসা ও হৃদয়ের টান মানুষের সবচেয়ে আপন প্রবৃত্তি ও মৌলিক অনুভূতি। এ ভালোবাসা কখনো কখনো সুপ্ত থাকে, কখনো কখনো তা প্রকাশ পায় মহা ধুমধামে। দেশ যত ক্ষুদ্র বা পরিসরে ক্ষুদ্র হোক না কেন প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে তার জন্মভূমি, তার দেশ সবার সেরা। দেশকে যে ভালোবসে সে তার স্বদেশের জন্য তার ধন-মান এমনকী জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে পারে। ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষ যখন একই জীবন ধারায়, একই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারায় পুষ্ট হয়ে একই আদর্শের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে তখন মৃন্ময়ী দেশ চিন্ময়ী হয়ে ওঠে। স্বদেশ হয়ে ওঠে অতি আনন্দের পীঠস্থান। সুখের দিনে স্বদেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসার চেয়ে দেশের দুর্দিনে স্বদেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসার তীব্রতা লক্ষ করা যায়। দেশের সংকটে দেশ যখন নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসে তখন একজন স্বদেশপ্রেমিকের মূল কর্তব্য পালনের সুবর্ণ সুযোগ আসে। যখন রক্ত চক্ষু বিদেশি শাসকের, যখন পরাধীনতার বিষ জ্বালায় জর্জরিত মানুষ মুক্তি কামনায় উদ্বেল অস্থির, যখন দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়, তখনই আসে মানুষের স্বদেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রের দীক্ষালগ্ন। জীবন অপেক্ষা স্বদেশ তখন হয়ে ওঠে আরো অতি প্রিয়তর। তখন মনে হবে, দেশের জন্য নিঃশেষে প্রাণ কে করিবে দান মন্ত্রণার মতো। বিদেশ গেলে বা ফেরত এলে এই দেশের মর্মগত অর্থ বোঝা যায়। তাই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কণ্ঠে ভেসে আসে,
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’
স্বদেশপ্রেম শিক্ষা : দেশকে ভালোবাসতে শিখলেই দেশের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি গড়ে উঠবে। যদিও স্বদেশপ্রেম মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি তবু এ গুণটি অর্জন করতে হয়। আর এ গুণ অর্জনের জন্য দেশের সুদিনে বা দেশের উন্নয়নে তৎপর থাকতে হবে। আর দেশের দুর্দিনে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি গড়ে তুলতে হবে। দেশ সমন্ধে জানতে হবে, দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে আর তাহলেই দেশপ্রেমের মহৎ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যাবে। মনীষীদের মতে- ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’
স্বদেশপ্রেম সুন্দর ও মহত্তে¡র উৎস : যে কারো কাছে তার স্বদেশ তার চোখে পৃথিবীর সেরা, এবং তার রূপের কাছে অন্য কারো দেশ সুন্দর হতে পারে না। এভাবেই দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসা সুন্দর ও মহত্ত্বে ভরে ওঠে। স্বদেশপ্রেম মনুষ্যবোধকে জাগ্রত করে। স্বদেশের ভালোবাসা শুধু মানুষের মোহমুক্তি ঘটায় না, সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্বীয়স্বার্থ ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। স্বদেশপ্রেম মানুষের ভেতরকার সব সংকীর্ণতা দূর করে তাকে মহৎ হওয়ার দীক্ষা দেয়। স্বদেশপ্রেমের স্পর্শে মানুষের ভেতরের সব পশুত্ববোধ দূর হয় এবং মানব কল্যাণে মানুষ নিজেকে উৎসর্গ করার মন্ত্রণা অর্জন করে। যাবতীয় সুন্দর ভাবনা ও মহৎ উদ্দেশ্য স্বদেশপ্রেমে অধিভূক্ত। তাই মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের ভাষায় বলা যায়-
‘স্বদেশের উপকারে নাই যার মন
কে বলে মানুষ তার পশু সেই জন।’
স্বদেশপ্রেমের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত : যুগে যুগে স্বদেশের জন্য মানুষ বহু দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন; যাঁরা আজও দেশের মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস হয়ে আছেন। উদাহরণস্বরূপ উপমহাদেশের বঙ্গবন্ধু, শেরে-ই-বাংলা, ভাসানি, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, মহাত্মা গান্ধি, নেতাজি সুভাষ বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথসহ আরো হাজার হাজার মানুষ এবং বাইরের দুনিয়ার বাস্তব উদাহরণ রয়েছে ইতালির গ্যারিবাল্ডি, রাশিয়ার লেলিন ও স্ট্যালিন, চীনের মাও সেতুং, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, ভিয়েতনামের হো-চি-মিন, তুরস্কের আতাতুর্ক মোস্তফা কামাল, আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারা, জার্মানির এ্যাডলফ হিটলারসহ আরো অনেকেই নিজ দেশের জন্য আত্মবিসর্জন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ ও ১৯৭১ সালে দেশের জন্য জীবন দেয়া লক্ষ লক্ষ শহিদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্রসহ শ্রমজীবী মানুষের উৎসর্গীত আত্মদান এক চরম দেশপ্রেমের উদাহরণ। তাই বলা যায়-
‘দেশের জন্য যারা অকাতরে দিয়ে গেলো প্রাণ
হবে না হবে শোধ তাদের বিস্মৃত অবদান।’
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের বর্তমান জীবনে জাতীয়তা যখন সংকীর্ণতার অন্ধকূপে বন্দি হয়ে উগ্র রূপ ধারণ করে, তখন বিশ্বপ্রেম পদদলিত হয়। উগ্র জাতীয়তাবোধে কোনো স্বার্থকতা নেই। দেশ জননী, বিশ্বজননী এক ও অভিন্ন। কারণ দেশ জননীর বুকের ওপর বিশ্বজননীরও আঁচল পাতা। স্বদেশ ও বিশ্বপ্রেম তাই আমাদের জাতীয় জীবনের এপিঠ-ওপিঠ। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুরে বলা যায়-
‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ী-তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।’
ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্বদেশভূমির প্রতি ভালোবাসায় উদ্বেলিত হয়ে বলেছিলেন-
‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!’
শেষ কথা : সবাইকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বদেশকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে। স্বদেশ মানুষের নিকট পরম সাধনার ধন; কামনার অক্ষয় স্বর্গ। যে দেশ বাঁচার অনুপ্রেরণায় আলো, বাতাস, অন্ন, জল, বস্ত্রসহ সন্তান সুলভ জীবনের সবুজাভ আনন্দ দিলো সেই মমতামণ্ডিত আনুগত্যের দেশকে ভালোবাসা আমাদের শ্রেষ্ঠ কাজ। যেহেতু দেশপ্রেমিক ব্যক্তিই বিশ্ববরেণ্য খ্যাতি লাভ করে। স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমে আমরা বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সেতু বানাতে পারি। তাই, যত বড় ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিপদ আসুক না কেন আমরা আমাদের জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করবো, দেশের সেবা করবো আর এতেই স্পষ্ট হবে আমাদের স্বদেশপ্রেমের অনন্যতা।
ইংরেজ কবি Sir Walter Scott-এর ভাষায় :
‘Breathes there the man with soul so dead
Who never to himself hath said
This my own, my native land!
Whose hearth hath never within him burn’d.’
তাই স্বদেশ বলতে আমাদের বাংলাদেশ আমাদের হোক :
‘পালা-পার্বনের ঢাকে ঢোলে
আউলবাউল নাচে-পুণ্যাহের সানাই রঞ্জিত
রোদ্দুর আকাশ তলে দেখ কারা হাঁটে যায়, মাঝি
পাল তোলে, তাঁতি বোনে, খড়ে ছাওয়া ঘরের আঙনে
মাঠে ঘাটে শ্রমসঙ্গী নানা জাতি ধর্মের বসতি
চিরদিন বাংলাদেশ।’
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
বাংলা রচনাঃ জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব(অন্য বই থেকে )
ভূমিকা :
‘যখন ঈশ্বর ভক্তি এবং সর্বলোকে প্রীতি এক, তখন বলা যাইতে পারে যে
ঈশ্বরে ভক্তি ভিন্ন দেশপ্রীতি সর্ব্বাপেক্ষা গুরুতর ধর্ম।’
-বঙ্কিমচন্দ্র।
নিজের দেশকে ভালোবাসে না এমন কে আছে? নিজের দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুণ। সামাজিক মানুষের দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধই হল দেশপ্রেমের উৎস। বৃহত্তর অর্থে মানুষ ধরিত্রীর সন্তান। এই বিশাল বিশ্বের যে ভূখণ্ডে মানুষ জন্ম নেয়, যে দেশের আলো বাতাস ধূলিকণায় তার নিশ্বাস-প্রশ্বাস, যে দেশের ধর্ম, ভাষা, পালাপার্বণে তার একাত্ম হওয়ার আকুতি ও মুক্তি সেই দেশই হল তার স্বদেশ। সেই দেশের মানুষই হল তার স্বজন। আর সেই দেশের প্রীতিই হল তার স্বদেশপ্রেম। দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুণ। সামাজিক মানুষের গভীর মমত্ববোধই হলো দেশপ্রেমের উৎস, স্বজাতি-প্রীতির বন্ধন। দেশপ্রীতি তাই মানুষের এক মহৎ উত্তরাধিকার। জননী জন্মভূমি তখন স্বর্গের চেয়েও গরীয়সী মহিমায় দীপ্ত। মানুষের তখন একটাই প্রার্থনা-
‘আমার এই দেশেতেই জন্ম যেন, এই দেশেতেই মরি।’
কিংবা,
‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালবেসে ।।’
-রবীন্দ্রনাথ
দেশপ্রেমের স্বরূপ, চেতনা ও দৃষ্টান্ত :
‘স্বদেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম, যে নিজের দেশকে ভালোবাসে, সে বিশ্বপ্রেমিক, মানব-প্রেমিক মানবতাবাদী।’
-সমুদ্র গুপ্ত।
দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুণ। যে কোনো ব্যক্তি স্বদেশের মাটি, স্বদেশের পানি, আকাশ-বাতাস, পরিবেশ, মানুষ, কৃষ্টি- এই সবকিছুর মধ্যে শিশুকাল থেকেই সে মায়ের আদলে পুষ্ট হতে থাকে। তার দেহ মন বিশ্বাস আদর্শ সবকিছুই স্বদেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা পুষ্ট। ফলে স্বদেশের জন্যে তার যে প্রেম তা কৃতজ্ঞতার, কর্তব্যের এবং দায়িত্বের। বস্তুত মা, মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার মধ্যেই দেশপ্রেমের মূল সত্য নিহিত। তাই সে দেশের ভাষা-সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতি এবং জীবন ও পরিবেশকে ভালোবাসতে শুরু করে। এই ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। শুধু মুখে মুখে এই ভালোবাসার কথা বললেই দেশপ্রেম হয় না। চিন্তায়, কথায় ও কাজে দেশের জন্য যে ভালোবাসা প্রকাশ পায় সেটাই প্রকৃত দেশপ্রেম। বিশেষভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, স্বদেশপ্রেম যেসব বৈশিষ্ট্য দ্বারা উজ্জ্বল সেগুলো হল- আত্মত্যাগ, বীরত্ব, সরলতা, শর্তহীনতা, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব, কর্তব্য এবং একাত্মবোধ।
গর্ভধারিণী জননীকে সন্তান যেমন ভালোবাসে, তেমনি দেশ-মাতৃকাকেও মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে এবং ভালোবাসতে শেখে। দেশ যত ক্ষুদ্র বা যত দরিদ্রই হোক না কেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে তার জন্মভূমি, তার দেশ, সবার সেরা। যে কোনো ব্যক্তির সকল প্রাপ্তি তার স্বদেশের অবদান বলে স্বদেশের প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে তার ধন, জন, মান, এমনকি জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। দেশ ও জাতির জীবনে যেমন সুখ আর ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য তখন মানুষের স্বদেশপ্রেম থাকে গভীর ঘুম-ঘোরে মগ্ন। দুঃখ, নির্যাতনের আঘাতে আঘাতেই হয় সেই সুপ্তি-মগ্নতার আবরণ উন্মোচন। দেশের যখন সংকট-মুহূর্ত, যখন বহিঃশত্রুর উল্লাস-অভিযানে দেশের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত, যখন পরাধীনতার বিষজ্বালায় জর্জরিত মানুষ মুক্তি-কামনায় উদ্বেল-অস্থির, যখন রক্তচক্ষু বিদেশি শাসকের নির্যাতন চরমে, তখনই আসে মানুষের স্বদেশ-প্রেমের অগ্নিমন্ত্রের দীক্ষালগ্ন। তখনই দেশের মর্যাদার জন্যে মানুষ অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেয়। শত শত শহীদের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই হয় দেশপ্রীতির প্রাণ-প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও জাতীয়তাবোধ হল স্বদেশপ্রেমের প্রধান উৎস। কত বীরের আত্মবলিদানে তখন স্বদেশের মৃত্তিকা হয় রক্তে রাঙা। অতীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তো স্বদেশ-প্রীতিরই জ্বলন্ত স্বাক্ষর।
স্বদেশপ্রেম অকৃপণ, উদার এবং খাঁটি। তা জীবনের প্রতি প্রেমকেও ছাড়িয়ে যায়। স্বদেশপ্রেমের এই সর্বগ্রাসী দিকটি এডউইন আর্নল্ডের ভাষায় চমৎকার ফুটে ওঠে:
‘জীবনকে ভালোবাসি সত্য, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।’
বিশেষভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, স্বদেশপ্রেম যেসব বৈশিষ্ট্য দ্বারা উজ্জ্বল সেগুলো হল- আত্মত্যাগ, বীরত্ব, সরলতা, শর্তহীনতা, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব, কর্তব্য এবং একাত্মবোধ।
দেশপ্রেমের প্রকাশ ও দৃষ্টান্ত : প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মধ্যে কোনো সংকীর্ণ চিন্তা থাকে না। দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধিই দেশপ্রেমিকের সর্বক্ষণের চিন্তা ও কর্মের বিষয়। দেশের স্বার্থকে তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে থাকেন। নিজের অহংকার, মেধা, প্রজ্ঞা ও গৌরব স্বদেশের জন্য নিবেদন করেন। স্বদেশের যে কোনো গৌরবে দেশপ্রেমিক মাত্রই গর্ববোধ করেন। তেমনি দেশের দুর্দিনে বা অমঙ্গলে শঙ্কিতচিত্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং নিঃশর্ত আত্মত্যাগী হয়ে ওঠেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে নির্দ্বিধায় জীবনকে উৎসর্গ করেন। যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ব্রিটিশ-বিরোধী স্বাধীনতার লড়াইয়ে জীবন দিয়েছেন তীতুমীর, প্রীতিলতা। ফাঁসির মঞ্চে জীবন উৎসর্গ করেছেন ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য শহীদ হয়েছেন, রফিক, বরকত, সালাম, জাব্বার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্ম-বিসর্জিত অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক, লক্ষ লক্ষ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অকুতোভয় সৈনিকদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে পারি। দেশপ্রেমের এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল। এছাড়া উপমহাদেশের শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেশপ্রেমের অম্লান স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তাছাড়া ইতালির গ্যারিবাল্ডি, রাশিয়ার লেনিন ও স্তালিন, চীনের মাও সেতুঙ, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, ভিয়েতনামের হো-চি-মিন, তুরস্কের মোস্তফা কালাম পাশা প্রমুখ ব্যক্তিগণ বিশ্বঅঙ্গনে দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে নিজ নিজ মহিমায় ভাস্বর। দেশপ্রেমের উৎকৃষ্টতম সংগ্রামে আত্ম-বিসর্জিত অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক, লক্ষ লক্ষ মা-বোন, রফিক, বরকত, সালাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অকুতোভয় সৈনিকদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে পারি। দেশপ্রেমের এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল।
দেশপ্রেমের উপায়:
“স্বদেশের উপকারে নেই যার মন
কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।”
পবিত্র ইসলাম ধর্মে ঘোষিত হয়েছে ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’ পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই, যে ধর্মে দেশকে ভালোবাসার নির্দেশ দেয়া হয় নি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মানুষ জীবনে যেকোনো সময়ে যেকোনো স্থান থেকে দেশকে ভালোবাসতে পারে। স্বীয় দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত। জাতির জন্যে, দেশের জন্যে, প্রত্যেক মানুষের জন্যে, তা সে ছোটই হোক কি বড়ই হোক- তার কিছু না কিছু করার আছে। কৃষক কৃষি-উৎপাদন বাড়িয়ে, সাহিত্যিক তাঁর সাহিত্যসাধনার মাধ্যমেও দেশের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করতে পারেন। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নিজের দৈন্যদশাকে তুচ্ছ করতে হবে এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। তাইতো মমিরুজ্জামান জন্মভূমির প্রতি মানুষের তীব্র আবেগ কাব্যে প্রকাশ করেছেন এভাবে-
‘আমারও দেশেরও মাটির গন্ধে
ভরে আছে এই মন,
শ্যামল কোমল পরশ ছড়ায়ে
নেই কিছু প্রয়োজন।’
দেশপ্রেমের উগ্রতা : দেশপ্রেম যেখানে মানুষের এক উন্নতবৃত্তি, সেখানে তা ত্যাগ-তিতিক্ষার মহৎ বৈভবে উদ্ভাসিত, সেখানে তা গৌরবের বস্তু, অহংকারের বিষয়। কিন্তু দেশপ্রেম যেখানে অন্ধ ও উগ্র, সেখানে জাতির জীবনে তা বিপজ্জনক। সেখানে তা ডেকে আনে এক ভয়াবহ সর্বনাশা পরিণতি। উগ্র দেশপ্রেম দিকে দিকে শুধু স্বজাতির শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এই নেশা মানুষের শুভবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে। জাতিতে জাতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়। একদিন ইউরোপ ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদের রক্তাক্ত হানাহানিতে মত্ত। অল্প সময়ের ব্যবধানেই দু দুবার রক্তক্ষরা বিশ্বযুদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবোধেরই অনিবার্য পরিণাম। স্বাদেশিকতার উগ্রতায় তাই মানুষের চির অকল্যাণ, চির অশান্তি। এতে নেই জাতির বাঞ্ছিত সমৃদ্ধি।
দেশপ্রেম ও রাজনীতি : স্তুত রাজনীতিবিদদের প্রথম ও প্রধান শর্তই হল দেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেমের পবিত্র বেদীমূলেই রাজনীতির পাঠ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদ দেশের সদাজাগ্রত প্রহরী। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদদের চেহারা ভিন্ন। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই মহত্তর, বৃহত্তর কল্যাণবোধ থেকে ভ্রষ্ট। ব্যক্তিক ও দলীয় স্বার্থচিন্তাই অনেক ক্ষেত্রে প্রবল। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, মানুষের প্রয়োজনে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার সাধনা, দেশপ্রেমের অঙ্গীকার ও সার্থকতা, তা এখন প্রায়ই অনুপস্থিত।
দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। তাই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। বরং স্বদেশপ্রীতির ভেতর দিয়ে বিশ্বপ্রীতির এক মহৎ উপলব্ধি, জাগরণ। স্বদেশ তো বিশ্বেরই অন্তর্ভুক্ত। স্বদেশপ্রেম যদি বিশ্বমৈত্রী ও আন্তর্জাতিক সৌভ্রাতৃত্বের সহায়ক না হয় তবে তা প্রকৃত দেশপ্রেম হতে পারে না। স্বদেশবাসীকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ বিশ্ববাসীকে ভালোবাসতে শেখে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে মানুষ-বিশ্বপ্রেমের এই বাণীকে জাতীয় জীবনে গ্রহণ করলেই সংকীর্ণ, অন্ধ জাতীয়তাবোধ থেকে আমাদের মৃক্তি আসবে।
দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে সম্পর্ক : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মতে, জাতীয়তা ও স্বদেশপ্রেম যখন সঙ্কীর্ণতার অন্ধকূপে বন্দি হয়ে উগ্র ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করে, তখন বিশ্বপ্রেম পদদলিত হয়। স্বদেশকে একমাত্র পরম প্রিয় মনে করে আমরা বিশ্বকে শত্রু মনে করি এবং তাকে ধ্বংস করবার জন্য ধাবিত হই। তখন শুভ বিচার-বুদ্ধি স্বদেশপ্রেমের অন্ধ আবেগে লুপ্ত হয়। ফলে পরস্পর হানাহানি এবং অবারিত রক্তক্ষয় অনিবার্যরূপে দেখা দেয়। আর, নানা মারণাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে সেই হানাহানি অচিরেই ধারণ করে বিভীষিকাময় রূপ। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতার চরণ দুটি প্রণিধানযোগ্য-
“ও আমার দেশের মাটি, তোমার’পরে ঠেকাই মাথা,
তোমাতে বিশ্বময়ীর- তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।”
উপসংহার :
‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাঁচিতে চায়
দাসত্বশৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে
কে পরিবে পায়।’
-রঙ্গলাল
দেশপ্রেম মানবজীবনের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ ও অমূল্য সম্পদ। একটি মহৎ গুণ হিসেবে পত্যেক মানুষের মধ্যেই দেশপ্রেম থাকা উচিত। দেশপ্রেমের মূল লক্ষ্য মানুষকে ভালোবাসা। দেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই অংশ বিশেষ। ব্যক্তিস্বার্থকে ত্যাগ করে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে ভালোবাসাই দেশপ্রেম। আর দেশের ঊর্ধ্বে সমগ্র পৃথিবীকে ভালোবাসাই বিশ্বপ্রেম। বিশ্বপ্রেমের মধ্য দিয়ে সকলের সাথে উদার ভ্রাতৃত্ব ঘোষণা করে বলতে হবে-
‘সব ঠাঁই মোর ঘর আছে আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া
দেশে দেশে মোর দেশ আছে আমি সেই দেশ লব জুঝিয়া।’
সুতরাং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কিছু না কিছু অবদান রাখা প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
- ডিগ্রি ৩য় বর্ষের সাজেশন (১০০% কমন ডাউনলোড করুন), ডিগ্রি ৩য় বর্ষের পরীক্ষার সাজেশন [নিশ্চিত ১০০% কমন সকল বিষয়ে]
- hsc/এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র সংক্ষিপ্ত সাজেশন, ফাইনাল সাজেশন এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র, hsc logic 1st paper suggestion 100% common guaranty, special short suggestion hsc suggestion logic 1st paper
- প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সুপার সাজেশন ও উত্তর, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ভিত্তিক সাজেশন,প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সাজেশন,কম সময়ে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
বাংলা রচনাঃ জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব (অন্য বই থেকে )
ভূমিকা : বৃহত্তর অর্থে মানুষ ধরিত্রীর সন্তান। কিন্তু পৃথিবী সুনির্দিষ্ট অর্থে তার জন্মপরিচয়ের ঠিকানা নয়। প্রতিটি মানুষ জন্ম নেয় পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে, যা তার কাছে তার স্বদেশ। এই স্বদেশের সঙ্গেই গড়ে ওঠে তার নাড়ির সম্পর্ক। স্বদেশের জন্যে তার মনে জন্ম নেয় নিবিড় ভালোবাসা। এই ভিন্নধর্মী অনন্য ভালোবাসাই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। এই প্রেমই স্বদেশের প্রতি গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধাকে আবেগ-নিটোল করে তোলে। কবির কণ্ঠে তারই আবেগাপ্লুত প্রগাঢ় উচ্চারণ-
’ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’
স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ : যে মাটিতে মানুষ জন্ম নেয়, যে মাটির আলো-বাতাস, অন্ন-জলে সে বেড়ে ওঠে তার প্রতি তার প্রাণের টান না থেকে পারে না। জন্মভূমির ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশের প্রতি থাকে তার এক ধরনের আবেগময় অনুরাগ। জন্মভূমির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার শেকড়ের বন্ধন। স্বদেশের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি এই অনুরাগ ও বন্ধনের নাম স্বদেশপ্রেম। মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার প্রতি মানুষের যে চিরায়ত গভীর ভালোবাসা তারই বিশেষ আবেগময় প্রকাশ ঘটে স্বদেশপ্রেমের মধ্যে। জন্মভূমির এক চির আরাধ্য, চির পবিত্র, চির ভাস্বর মাতৃসম ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে মানুষের হৃদয়ে। স্বদেশপ্রেমের সেই তীব্র আবেগের বাণীরূপ আমরা পাই রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ বন্দনায় :
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম মা গো, তোমায় ভালোবেসে-
স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি : দেশ ও দেশের প্রতি মানুষের যে বন্ধন ও আকর্ষণ তা থেকেই স্বদেশপ্রেমের জন্ম। আর সেই কারণে জন্মভূমি মানুষের কাছে কেবল সকল দেশের সেরা নয়, তাকে স্বর্গের চেয়েও সেরা বলে মনে হয়। এই স্বদেশ চেতনাই কবি জীবনানন্দের অন্তরে সঞ্চার করেছিল এক অতিরেক আবেগের :
বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই
আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।
স্বদেশপ্রেম মানবচিত্তে ফাল্গুধারার মতো সদা সহমান থাকে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ সময়ে, বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে তার আবেগোচ্ছল উৎসারণ ঘটে। যখন দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় জাতির ভাবসম্মিলনের, তখন দেশাত্মবোধ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ভেদ ভুলে একই ভাবচেতনা দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে। স্বদেশপ্রেমের সেই শুভ উদ্বোধনে তখন অন্তর জুড়ে বাজে স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা স্মৃতি দিয়ে তৈরি স্বদেশ বন্ধনার গান : ‘সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’ স্বদেশ প্রেমে উদ্বেল চিত্ত কামনা করে,
‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।’
আবার কখনো পরাধীনতার দুঃখ বেদনায়, ভিনদেশী শাসকের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুক্তিব্রতে সামিল হবার সময়ে স্বদেশপ্রেম জাতীয় জীবনে জাগরণ ঘটায়, ঘটায় নব চেতনাময় দুর্বার প্রাণশক্তির উদ্বোধন
’স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়’
স্বদেশের লঞ্ছনা মোচনের আকাঙ্ক্ষায় মানুষের অন্তরে মন্দ্রিত হয় আত্মত্যাগের মহামন্ত্র :
’নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই’
স্বদেশপ্রেম দেশ ও জাতির অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রেরণাময় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একই চেতনায় একপ্রাণ হয়ে মহৎ লক্ষ্য সাধনে ব্রতী করে। মানব-সম্প্রীতি গড়ে তুলে শুভকর্মে ব্রতী হওয়ায় তখন স্বদেশপ্রেম উজ্জীবনী প্রেরণার কাজ করে:
কাহাকেও তুমি ভাবিও না পর হিন্দু-মুসলমান
ব্রাহ্ম, বৌদ্ধ, যেই হোক সে যে স্বদেশের সন্তান।
প্রীতির নয়নে চাহ যদি সবা পানে তাহারা নয়নমণি
স্বদেশের শুভ চাহ যদি লহ সবারে আপনা গনি।
কখনো কখনো স্বদেশপ্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিদেশে ভিন্নতর জীবন-পরিবেশে। তখন স্বদেশের মানুষ ও প্রকৃতির জন্যে জাগে অসীম আকুলতা। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে অনেক সুখের মধ্যে থেকেও দেশের তরুলতা ঘেরা ছায়াচ্ছন্ন জীর্ণ কুটিরের জন্যে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
স্বদেশেপ্রেমের ভিন্নতর বহিঃপ্রকাশ : কেবল সংকটে, স্বাধীনতা সংগ্রামেই যে দেশপ্রেমের স্ফুরণ হয় এমন নয়। শিল্প-সাহিত্য চর্চায়, দেশগঠন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনাতেও স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দেশের কল্যাণে ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে, বিশ্ব সভ্যতায় অবদান রেখে দেশের গৌরব বাড়ানো যায়। বিশ্বসভায় দেশ মহিমান্বিত আসন লাভ করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জগদীশচন্দ্র বসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এফ. আর. খান. প্রমুখের অবদানে বিশ্বে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বর হয়েছে।
স্বদেশপ্রেমের বিকৃত রূপ : স্বদেশপ্রেম পবিত্র। তা দেশ ও জাতির জন্যে গৌরবের। কিন্তু স্বদেশপ্রেম যদি উগ্র ও অন্ধরূপ নেয় তখন তা কল্যাণের পরিবর্তে ধ্বংসের পথ রচনা করে। অন্ধ স্বদেশপ্রেম উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়। এ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদ জাতিতে জাতিতে সংঘাত ও সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জার্মানিতে হিটলার ও ইতালিতে মুসোলিনি উগ্র জাতীয়তা ও অন্ধ দেশপ্রেমের যে নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ লোককে বীভৎস মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল। বিপন্ন হয়েছিল বিশ্বমানবতা।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : স্বদেশপ্রে বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। তাই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকতে পারে না। স্বদেশপ্রেম যদি বিশ্বমৈত্রী ও আন্তর্জাতিক সৌভ্রাতৃত্বের সহায়ক না হয় তবে তা প্রকৃত দেশপ্রেম হতে পারে না। স্বদেশবাসীকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ বিশ্ববাসীকে ভালোবাসতে শেখে। বিশ্বজননীর বুকের আঁচলের ওপর যে দেশজননীর ঠাঁই রবীন্দ্রনাথ তাঁর অমর বাণীতে বলে গেছেন সে কথা :
ও আমার দেশের মাটি, তোমার ‘পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ীর- তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।
স্বদেশপ্রেমের সঙ্গে বিশ্বমৈত্রীর গভীর যোগসূত্র আছে বলেই রবীন্দ্রনাথ, শেকসপিয়র, আইনস্টাইন কেবল স্ব-স্ব দেশের নন, তাঁরা সমগ্র মানব জাতির।
দেশপ্রেমের উজ্জ্বল প্রতিভূ : দেশে দেশে যাঁরা দেশপ্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে বরণীয় স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁরা সারা বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব বাঙালি অসামান্য অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে নেতাজী সুভাষ বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, এ. কে. ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখ চিরদিন আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বহু রাষ্ট্রনায়ক দেশ ও জাতিকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইতালির গ্যারিবাল্ডি, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, রাশিয়ার লেনিন, চীনের মাও সেতুঙ, ভিয়েতনামের হো. চি. মিন, তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা, ভারতের মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ দেশপ্রেমের জন্যেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের দেশপ্রেম বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে।
উপসংহার : দেশপ্রেম মানুষের জীবনের অন্যতম মহৎ চেতনা। তা মানুষকে স্বার্থপরতা, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতা, রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভেদাভেদ থেকে উর্ধ্বে উঠতে সহায়তা করে। উদ্বুদ্ধ করে দেশের কল্যাণে স্বার্থত্যাগ করে আত্মনিবেদনে। তাই ক্ষমতার লোভ ও দলীয় স্বার্থ চিন্তা কখনো সত্যিকার দেশপ্রেম হতে পারে না। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। একুশ শতকের পৃথিবীতে বিশ্ব সভায় মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্যে আজ দরকার দেশগঠনের কাজে সকলকে উদ্বুদ্ধ ও সমবেত করা। এজন্যে চাই ঐক্যবদ্ধ দেশব্রতী জাতীয় জাগরণ। তাহলেই দেশ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারায় অগ্রসর হতে পারবে। দেশগঠনে আমরা যেন শুভ চিন্তা ও ত্যাগের আদর্শ স্থাপন করতে পারি।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
Paragraph & Composition/Application/Emali | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক | প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
- বাংলাদেশের সংবিধানের প্রনয়ণের প্রক্রিয়া শুরু হয় কবে? উত্তর-২৩ মার্চ, ১৯৭২,বাংলাদেশের সংবিধান কবে উত্থাপিত হয়? উত্তর- ১২ অক্টোবর, ১৯৭২,গনপরিষদে কবে সংবিধান গৃহীত হয়? উত্তর-০৪ নভেম্বর,১৯৭২,কোন তারিখে বাংলাদেশের সংবিধান বলবৎ হয়? উত্তর-১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২
- Hon‘s 2nd: Business Communication & Report Writing
- Degree 3rd Year Exam Marketing 5th paper Suggestion