বিষয়: PDF Download দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন স্বপ্ন রচনা,‘দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন স্বপ্ন’ বিষয়টির উপর রচনা লিখুন, রচনা দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন স্বপ্ন , রচনা দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন স্বপ্ন রচনা, দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন স্বপ্ন রচনা PDF Download,
অন্য বইয়েল আলোতে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে, তখন অনেকেই আমাদের দেশটিকে “A test case for Development” বলে অভিহিত করেছিলেন। যা অনেকটা ছিল বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে ছুড়ে দেওয়া উন্নত দেশের একটি চ্যালেঞ্জের মতো। উন্নত দেশগুলো ভাবতেন যে, বাংলাদেশে উন্নয়নের পথে এমন অনেকগুলো বাধা রয়েছে, যা ডিঙিয়ে বাংলাদেশের উন্নত হওয়াটা হবে অসম্ভব একটি ব্যাপার।
প্রথমত, নতুন স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ নামক দেশটিতে তখন লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি আর দেশটির আয়তন ছিল মাত্র ৫৪ হাজার বর্গমাইল। এত ছোট আয়তনের দেশে এত বেশি লোক পৃথিবীতে তখন খুব একটা ছিল না। তখনো বাংলাদেশ জনসংখ্যা/বর্গমিটার হিসেবে নবম বা দশম হবে। তা ছাড়া ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত দেশটির ওপর একধরনের আধা ঔপনেবিশিক শোষণ চালানো হয়েছিল। ফলে দেশের ভেতরে শিল্পায়নের মাত্রা ছিল কম। অবকাঠামো ছিল দুর্বল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছিল অবিকশিত। এসব উন্নতির ছিটেফোঁটা যেটুকু ছিল তার সবটাই প্রায় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের দখলে। সারা পাকিস্তানে তখন ব্যাংক-বিমা, শিল্প-কারখানা ইত্যাদি সম্পদের সিংহভাগ ছিল ২২টি পরিবারের দখলে এবং তাদের মধ্যে একটি পরিবার ছিল বাঙালি।
এছাড়া প্রশাসনযন্ত্রে, আর্মিতে রাজনৈতিক বিভিন্ন উচ্চপদে — সর্বত্র ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রাধান্য। সুতরাং পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত আধা-ঔপনিবেশিক শোষণ-নির্যাতন-বৈষম্যের শিকার একটি প্রদেশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম প্রতিবাদের রব ওঠে ১৯৫২ সালে, পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র পাঁচ বছর পর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এর পরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ছয় দফা স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন, ১১ দফা জনগণের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ। এসব সংগ্রামের মূলে ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা।
১৯৭১ সালে ৯ মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হলো ঠিকই, কিন্তু দেশের সারা অঙ্গে রয়ে গেল ঔপনিবেশিক শোষণের ক্ষতচিহ্ন। পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘পোড়া মাটির নীতি’ অনুসরণ করেছিল। অর্থাৎ তারা ভেবেছিল, তারা যদি পরাজিত হয়ে এ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়, তাহলে তারা যাওয়ার আগে সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে যাবে। আর এই নীতি তারা অক্ষরে অক্ষরে কার্যকর করেছিল। প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে, ১ কোটি লোককে উদ্বাস্তুতে পরিণত করে, ফসল ও কারখানা ধ্বংস করে দিয়ে, সমস্ত যোগাযোগব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড করে দেয় তারা।
সবাই ভেবেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে দুই দিনও টিকতে পারবে না। দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। অর্থনীতি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। পাকিস্তানিরাও তাই আশা করেছিল এবং তাই পরাজয়ের পূর্বমুহূর্তে তারা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের রাও ফরমান আলী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে গঠিত বদর বাহিনীর নীল নকশা অনুযায়ী হত্যা করে যায়। তারা ভেবেছিল, সেভাবেই বাংলাদেশকে তারা নেতৃত্বশূন্য করে দিতে পারবে এবং বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে। আর এসব বাস্তব পাহাড়সম অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলোর জন্যই অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিত তখন বলেছিলেন যে, এতত্সত্ত্বেও যদি বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াতে পারে, উন্নত দেশে পরিণত হতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে যে পৃথিবীর যে কোনো অনুন্নত দেশই একদিন না একদিন উন্নত হতে পারবে।
আজ শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দাবি করতে পারে যে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যায়নি, মাথা তুলে সে বিশ্বের মাঝে বুক ফুলিয়ে উন্নত দেশ হওয়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্জনসমূহ
এখন পৃথিবীতে যে ১১টি দেশকে ভবিষৎ উন্নয়নের জন্য ‘উদীয়মান এগারো’ বলে অভিহিত করা হয়, তাদের মধ্যে আমরা একটি দেশ হিসাবে বিরাজ করছি। আমরা গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের আশপাশে ধরে রেখেছি। আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার ১৯৭৪ সালে ছিল ৭৫ শতাংশ। (অর্থাৎ শতকরা ৭৫টি পরিবারেরই বেঁচে থাকার মতো খাবার কেনার সামর্থ্য ছিল না) আজ সেই হার ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও করোনার কারণে তা আবার কিছুটা বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে (কারো কারো মতে দ্বিগুণ হয়ে গেছে)। আমরা ১৯৭১ সালে ছিলাম কৃষিপ্রধান দেশ। আজ জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ, শিল্পের ৩০ শতাংশ এবং সেবা খাতের অবদান ৫৭ শতাংশ। আমরা আজ কাঠামোগতভাবে আধুনিক শিল্পায়িত দেশে পরিণত হতে চলেছি। কিন্তু প্রায় ১৬ কোটি লোককে আজ আমাদের কৃষকেরা কম জমিতে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ উত্পাদন বৃদ্ধি করে খাইয়ে-পরিয়ে রেখেছেন—এটা মোটেও কম কোনো অর্জন নয়!
আমাদের দেশে লক্ষণীয়ভাবে নারীরা কাজে-কর্মে এগিয়ে এসেছেন এবং তার ফলে অনেক পরিবারেই এখন দুজন উপার্জনকারী সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দারিদ্র্যের চাপও অনেক কমেছে। আমাদের দেশে প্রায় শতভাগ শিশু এখন প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃ মৃত্যুর হার, গড় আয়ুষ্কাল ইত্যাদি মানব উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ প্রতিবেশী দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন স্বয়ং এ কথা আজ বলছেন।
আমাদের পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, সিমেন্ট শিল্প, মাছ, সবজি, ফুল ইত্যাদি পণ্য সারা দুনিয়ায় এখন রপ্তানি হচ্ছে।
আমাদের দেশের বিদেশে কর্মরত নাগরিকেরা যে রেমিট্যান্স প্রতি বছর পাঠান, তা দিয়ে আমরা আমাদের বিশাল বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার গড়ে তুলেছি। বিদেশিরা অর্থসাহায্য না দিলেও আমরা এখন নিজেদের টাকাতেই নিজেদের পদ্মা ব্রিজসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে সক্ষম। আমাদের তথাকথিত ‘বিদেশি দাতা দেশগুলো’ আজ আর পরিহাস করে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিতে পারে না।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের এমডিজির (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জনসহ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। যষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয় সব মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে। ফলে বাংলাদেশ যে একদিন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে, সে কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জসমূহ
কিন্তু মধ্য আয়ের দেশে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের দুটো গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই উদ্দেশ্যেই ৫০ বছর আগে বাইরের শোষণ-বৈষম্য-নির্যাতন থেকে আমরা প্রথমে স্বাধীন হয়েছিলাম, আজ দেশের ভেতরের শোষণ-বৈষম্য-নির্যাতন থেকে আমাদের জনগণকে মুক্ত করতে হবে। ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নও তা-ই ছিল। তাই রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার উভয়ই আমাদের অর্জন করতে হবে। যদিও এ দুটো লক্ষ্য একসঙ্গে অর্জন ঐতিহাসিকভাবে খুবই কঠিন একটি কাজ। আমাদের এ কাজ সমাপন করার জন্য হতে হবে গুহার ভেতরে আহত রাজা রবার্ট ব্রুসের দেখা সেই মাকড়সার মতো, যে জাল বেয়ে শত বার পড়ে যাওয়ার পরেও শত বার ওপরে ওঠার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল।
বঙ্গবন্ধুও দুঃখী মানুষের মুক্তির জন্য দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত শোষণহীন-সমাজতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক দেশের মহত্ স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা তার আত্মজীবনীতে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনি ভাষণে, তার স্বহস্তে স্বাক্ষরিত ১৯৭২ সালের সংবিধানে এবং স্বাধীনতা উত্তর নানা বক্তব্য, বিবৃতিতে নানাভাবে বিধৃত আছে। কিন্তু তার মৃত্যুর আগেই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও খন্দকার মুশতাকের ছত্রছায়ায় দক্ষিণপন্থিরা ও নব্য ধনীরা (Nouveau Rich) শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং সপরিবারে তার মর্মান্তিক ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের পর এই গোষ্ঠীই সবকিছুর অন্যতম Beneficiar-তে রূপান্তরিত হয়। এ কথাও সত্য, বঙ্গবন্ধুও তার দলীয় শ্রেণিগত সীমাবদ্ধতার জন্য সমাজতন্ত্রের দিকে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হতে পারেননি। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন করে শেষ মুহূর্তে তিনি তার মতো করে একটি শেষ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা আঁতুড়ঘরেই মৃত্যুবরণ করে। বঙ্গবন্ধু শাহাদত বরণ না করে বেঁচে থাকলে কী হতো বা হতে পারত, সেই আলোচনা আজ বৃথা এবং নিতান্তই একটি অনুমানমূলক অমীমাংসেয় Hypothetical আলোচনা।
কিন্তু স্বাধীনতার ঊষালগ্নে দেখা বঙ্গবন্ধুর দারিদ্র্যমুক্ত-ক্ষুধামুক্ত-শোষণহীন-সমাজতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক দেশের মহৎ স্বপ্নটি তার দল আজ মূলত ছেড়ে দিলেও সাধারণ মানুষ দেশবাসী জনগণ এবং তার দলের ভেতরে ও বাইরে এখনো থেকে যাওয়া তার লাখ লাখ অনুসারী ভক্ত নিশ্চয়ই আজো সেই স্বপ্ন ছাড়েননি। সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের সঠিক পথটি না বের করা পর্যন্ত সব শহীদের প্রতি আমাদের ঋণ পূর্ণভাবে পরিশোধিত হবে না। আসুন, স্বীয় কর্তব্য সমাপ্ত করার জন্য ব্রুসের মতো অধ্যবসায় ও মনোযোগ দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আবার আমরা সেই ‘হারানো সিঁড়ির চাবিটি’ খুঁজে বার করি। আমরা শহীদদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধ করি। বিশ্বের বুকে আমাদের প্রিয় স্বদেশ শোষণহীন-লুণ্ঠনহীন-দুর্নীতিহীন গণতান্ত্রিক উন্নত স্বচ্ছ এক দেশ হিসেবে আবার মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়াক।
আরো ও সাজেশন:-
স্বাধীনতার পূর্ব ইতিহাসঃ মোগল সম্রাট নবাব সিরাজ-উ-দ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ১৭৫৭ সালে বর্তমান বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীনতা হারায়। তারপর থেকে ইংরেজি শাসন শুরু হয়। ইংরেজরা আমাদেরকে প্রায় 200 বছর ধরে শাসন করেছে। পাশাপাশি শোষক ও সম্বলহীন করেছেন। তখন কঠোর আন্দোলন ও যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনে ভারত উপমহাদেশসহ আরও অনেকে। স্বাধীনতা পাওয়ার পর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে। পাকিস্তান ঘুমাবে১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ও ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান আবার পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তান ছিল আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ। তখন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনে চলত পূর্ব পাকিস্তান। কারণ আমরা তখন স্বাধীনতা পাইনি। ১২০০ মাইল দূর থেকে আমাদেরকে শাসন করতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। পাশাপাশি করতে থাকে শোষণ ও নির্যাতন। প্রথমে তারা আঘাত হানে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার উপর।
তারপর থেকে নানা প্রকার শোষণ ও বঞ্চনা একে কে চালু করে। কিন্তু এসব বাঙালি মেনে নেয়নি। তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বাঙ্গালীদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এবং সাহস যোগান বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন যা বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর বর্তমানে ইউনেস্কো ঘোষণা দেন। তিনি বাংলাদেশ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ১৮ মিনিটের অলিখিত ভাষণে ও বাঙালি স্বাধীনতায় তুলে ধরেছেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে আমাদের বাংলাদেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ২৬ শে মার্চের রাতের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাঙালিদের কাছে এই ভাষণ পৌঁছে দেওয়া হয়। তারপর থেকে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদ হওয়ার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর পুনর্গঠনঃ আমাদের এই দেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও একটি দেশকে অনেক চাপ সামলাতে হয় দেশটি পূর্ণ গঠন করলে। বাংলাদেশের পুনর্গঠন বলতে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭১ সালের ধসে পড়া প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা সহ সমস্ত দিক দিয়ে কি কত করে করে দেশ পরিচালনা ও পুননির্মাণ করতে হয় সে প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থা স্বাধীনতা লাভের পর দুর্ভিক্ষের অবস্থার মত ভয়াবহ ছিল। তাছাড়া প্রায় আড়াই লক্ষ বাঙালি ১৯৭০ সালের বিশাল ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায়। সেই দুর্যোগ কাকে না উঠতেই শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ যাতে প্রায় তিরিশ লক্ষ বাঙালির প্রাণ হারায়। সবকিছু মিলিয়ে ভয়াবহ ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তী অবস্থা। কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে ধস নেমে এসেছিল।
তখনই দেশের জনসংখ্যার তুলনায় সবকিছুর যোগান অনেক কম ছিল। এবং বেশিরভাগ নাগরিক নিরক্ষর ছিল। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং সরকার গঠন করেন। এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগদান করেন। গঠন করেন অবকাঠামো উন্নয়ন গণ পরিবহন আইন।
এছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উপযুক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করেন। যার কারণে আমরা অনেক সাহায্য সহযোগিতা পাই বাহির থেকে। বঙ্গবন্ধু একজন অসাধারণ নেতা ছিলেন। তিনি আমাদের এই দেশ যখন থেকে পুনর্গঠন করে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তা পছন্দ হয়নি অনেকেরই। তাদের ষড়যন্ত্রের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হয়। এবং বাংলার উন্নয়ন আবার থেমে যায়।
বাংলাদেশের উন্নয়ন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয় কিন্তু সৌভাগ্যবশত বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। আর দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাঁর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা বলেছিল, আমাদের মাথাপিছু আয় ১০০০ ডলার হবেনা স্বাধীনতা অর্জনের ১০০ বছর পরও। কিন্তু তাদের কথার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছরেই। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৯৭০ সালে ছিল মাত্র ১৪০ ডলার। তাছাড়া করোনাকালীন সময়ই এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমেনি বরং বেড়েছে। এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হেনরি কিসিঞ্জারের কথানুযায়ী “তালা বিহীন ঝুড়ি” নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু শোষণ ও বঞ্চনার পর পেরিয়ে ১৯৭১ সালের পর থেকে আমরা এখন আর তালবিহীন নয়। এখন সাফল্য পরিপূর্ণ সেই ঝুড়ি। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের ৪০ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ।
সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাঃ ২০২১ অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে দরিদ্র এবং স্বল্পোন্নত পরবর্তীতে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। বাংলাদেশ একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করেছে ভিশন ২০৪১ সালের মধ্যে। বাংলাদেশের বর্তমানে চালু রয়েছে অনেক মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। যেমন মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ও বড় বড় ফ্লাইওভারের মত কাজ। তাছাড়া রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ৫৭ তম দেশ হিসেবে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নামে একটি স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছেন। এছাড়াও আরো ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলছে।
বাংলাদেশের অর্জন সুবর্ণজয়ন্তীতেঃ “উদীয়মান ১১” নামে বর্তমানে পৃথিবীর মোট ১১ টি দেশে ভবিষ্যতের উন্নয়নে বলে গণনা করা হয় যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বর্তমানে অর্থনীতিতে ৪১ তম দেশ বাংলাদেশ যা একসময় একদম শেষের দিকে ছিল। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার গত কয়েক বছরে গড়ে ৭% এর আশপাশে। যেখানে দরিদ্রের হার ১৯৭৮ সালে ছিল ৭৫%, সেখানে বর্তমান হার ২০%। কেবলমাত্র কৃষির উপরেই বাংলাদেশ জিডিপি (Gross Domestic Product) নির্ভরশীল নয়। কৃষিতে মাত্র .১৩% জিডিপিতে অবদান এবং শিল্প ও সেবা খাতের অবদান রয়েছে যথাক্রমে ৩০% ও ৫৭%। অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশে তা বিদেশে রপ্তানি করে অর্থ উপার্জন করছে। রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ সপ্তম। অন্যান্য অনেক দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসীরা কাজ করছে এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সাররা ফ্রিল্যান্সিং করে দেশের উন্নতি করছে। পাশাপাশি গড় আয়ু, জন্মকালে মাতৃমৃত্যুর হার ও শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। বাংলাদেশ থেকে সিমেন্ট, সবজি, মাছ, বিভিন্ন ফলমূল, ও পোশাক বিশ্বের প্রায় সব দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এলজিডি (Millennium Development Goals) অত্যন্ত সফলতার সাথে বাংলাদেশ অর্জন করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে সকল ক্ষেত্রে।
উন্নয়নের অন্তরায় বাংলাদেশঃ সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সকলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের কাজ করলেও ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে নিজেদের ধন-সম্পদ, টাকার কথা চিন্তা করে দেশকে ঠকাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে তারা এ সকল কাজ করছেন। দেশের কোন প্রকার উন্নয়ন এদের দ্বারা সম্ভব না। দুর্নীতি হচ্ছে আমাদের দেশে উন্নয়নের প্রধান সমস্যা। শুধুমাত্র যোগ্য লোকেরাই যেন উপযুক্ত চেয়ারে বসে সেই বিষয়ে আমাদের বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশঃ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশের আরেকটি প্রাপ্তি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্যে বিশ্বের সকল দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের বাংলাদেশকে চলার জন্য “ডিজিটাল বাংলাদেশের” রূপকল্প ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে ভিশন ২০২১ অনুসারী বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে বলা হয়েছিল। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলাই ছিল ভিশন ২০২১ এর মূল লক্ষ্য। বর্তমানে প্রায় সফলতার সাথে তা অর্জন করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আরও বেশি সফলতা অর্জন করত যদি করনা মহামারীর মতো তেমন কোনো বাধা না আসত।
আমাদের কর্তব্য বাংলাদেশের উন্নয়নেঃ অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের এই দেশের প্রতি। আমাদের কাজ করতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সে দেশ ততো বেশি উন্নত যে দেশের লোক যত বেশি শিক্ষিত। সকলকে তাই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। বিভিন্ন কাজ শিখতে হবে ঘরে বেকার বসে না থেকে। এর ফলে দেশের উন্নয়ন হবে ও নিজেদের অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরন হবে।
উপসংহারঃ ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের এই বাংলাদেশ। স্বাধীনভাবে আমাদের এই দেশে তাদের জন্য আমরা বসবাস করতে পারছি। তাই সবসময় আমরা তাদের স্মরণ করব। সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করব ও উন্নত দেশে পরিণত হব সুবর্ণজয়ন্তী পর ২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাআল্লাহ।
শেষ কথাঃ স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ৫০ বছর রচনা – স্বাধীনতা ৫০ বছর রচনা
বন্ধুরা আজ আমরা স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ৫০ বছর রচনা ও স্বাধীনতা ৫০ বছর রচনা লিখেছি। আমাদের এর স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ৫০ বছর রচনা ও স্বাধীনতা ৫০ বছর রচনা পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। আশা করি স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ৫০ বছর রচনা ও স্বাধীনতা ৫০ বছর রচনা পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। এরকম আরও পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুম। ধন্যবাদ।
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক |
Paragraph | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
Application | উত্তর লিংক | উত্তর লিংক | |
Essay | উত্তর লিংক | Letter | উত্তর লিংক |
এখানে সকল প্রকাশ শিক্ষা বিষয় তথ্য ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথে থাকুন ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
- বাংলাদেশের সংবিধানের প্রনয়ণের প্রক্রিয়া শুরু হয় কবে? উত্তর-২৩ মার্চ, ১৯৭২,বাংলাদেশের সংবিধান কবে উত্থাপিত হয়? উত্তর- ১২ অক্টোবর, ১৯৭২,গনপরিষদে কবে সংবিধান গৃহীত হয়? উত্তর-০৪ নভেম্বর,১৯৭২,কোন তারিখে বাংলাদেশের সংবিধান বলবৎ হয়? উত্তর-১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২
- Hon‘s 2nd: Business Communication & Report Writing
- Degree 3rd Year Exam Marketing 5th paper Suggestion