SSC : বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়: জীবনের জন্য পানি অনুধাবন মূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১।   পানির পুনরাবর্তন বলতে কী বোঝায়?

     উত্তর : দিনের বেলা সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের পানি সমুদ্র, নদ-নদী, খাল-বিলের পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং এক পর্যায়ে বাষ্প ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘ ও পরে তা বৃষ্টি আকারে ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে। এই বৃষ্টির পানির বড় একটি অংশ নদ-নদী, খাল-বিল ও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং ফের বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে যায় ও বৃষ্টি আকারে ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে। এভাবে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলে চক্রাকারে আবর্তনকে পানির পুনরাবর্তন বলে।

২।   পানিকে সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয় কেন?

     উত্তর : কোনো দ্রাবক বেশির ভাগ অজৈব পদার্থ ও জৈব যৌগকে দ্রবীভূত করলে সেটিই হয় সর্বজনীন দ্রাবক। পানি বেশির ভাগ জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগকে দ্রবীভূত করতে পারে এবং পানি দ্বারা তৈরি দ্রবণ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই এটি একটি সর্বজনীন দ্রাবক।

৩।   ক্লোরিনেশন বলতে কী বোঝায়?

     উত্তর : পানিতে কোনো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থাকলে, তা অবশ্যই দূর করতে হয় এবং তা করা হয় জীবাণুনাশক ব্যবহার করে। নানা রকম জীবাণুনাশক পানি বিশুদ্ধকরণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এদের অন্যতম হলো ক্লোরিন গ্যাস (Cl2)। এ ছাড়া ব্লিচিং পাউডার [Ca(OCl)Cl] ও ক্লোরিনযুক্ত আরো কিছু পদার্থ জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। জীবাণুমুক্ত করার এ প্রক্রিয়াকে ক্লোরিনেশন বলে।

৪।   গ্রিনহাউস গ্যাস বলতে কী বোঝায়?

     উত্তর : যেসব গ্যাস সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয় না; কিন্তু উত্তপ্ত পৃথিবী থেকে তাপকে চলে যেতে বাধা দেয় তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। যেমন—কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, সিএফসি, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি। বায়ুমণ্ডলে এসব গ্যাস পরিমাণে বেশি থাকলে ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল তাপ হারিয়ে শীতল হতে পারে না। ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।

৫।   জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেঙে যায় না কেন?

     উত্তর : জলজ উদ্ভিদ সারা দেহের মাধ্যমে পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান, বিশেষ করে খনিজ লবণ সংগ্রহ করে। এভাবে জলজ উদ্ভিদের সমগ্র দেহ পানির সংস্পর্শে থাকায় কাণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুব নরম হয়, যা পানির স্রোত ও জলজ প্রাণীর চলাচলের সঙ্গে মানানসই। আর এ কারণেই জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেঙে যায় না।

৬।   ইলিশ মাছ কেন নদীতে আসে? ব্যাখ্যা করো।

     উত্তর : ইলিশ মাছ লবণাক্ত পানির মাছ। জীবনের বেশির ভাগ সময় সমুদ্র বা নোনা পানিতে কাটালেও প্রজনন ঋতুতে ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশ মাছ নদীতে বা মিঠা পানিতে আসে। সমুদ্রের নোনা পানি ডিম নষ্ট করে দেয়, ফলে ইলিশের পোনা উৎপাদিত হতে পারে না। ডিমকে এই লবণাক্ততা থেকে রক্ষা করতেই ইলিশ সমুদ্র ছেড়ে নদীর মিঠা পানিতে আসে।

৭।   রামসার কনভেনশন বলতে কী বোঝো?

     উত্তর : ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসারে ইউনেসকোর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেওয়া জলাভূমিসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো হলো রামসার কনভেনশন। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে এই সমঝোতা চুক্তিতে সম্মতি জ্ঞাপন করে। পরে ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে রামসার কনভেনশন সংশোধন করা হয়।

৮।   ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এই কথাটির যথার্থতা কেন খুঁজে পাওয়া যায় না?

     উত্তর : বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর। বহুকাল আগে থেকেই এখানে ধানসহ অন্যান্য শস্য প্রচুর পরিমাণে জন্মে। আবার নদীবিধৌত দেশ হওয়ায় একসময় এ দেশে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এ জন্য এই স্থানে বসবাসরতদের বলা হতো ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। তবে বর্তমানে নদীনালায় মাছ একেবারেই পাওয়া যায় না। নদী ভরাট, দূষণসহ বিভিন্ন কারণে মাছের এ অপ্রতুলতা। এ কারণেই ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এই কথাটির যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায় না।

৯।   পরিস্রাবণ বলতে কী বোঝো?

     উত্তর : পরিস্রাবণ হলো তরল ও কঠিন পদার্থের মিশ্রণ থেকে কঠিন পদার্থকে আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানিতে বিদ্যমান অদ্রবণীয় ধুলাবালির কণা থেকে শুরু করে নানা রকম ময়লা-আবর্জনার কণা দূর করে পানিকে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। এ ক্ষেত্রে বালুর স্তর বা ক্ষুদ্রভাবে তৈরি কাপড়ের মধ্য দিয়ে পানিকে প্রবাহিত করা হয়।

১০। বৈশ্বিক উষ্ণতা বিপজ্জনক কেন?

     উত্তর : বৈশ্বিক উষ্ণতা হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। পরিবেশ ও মানব বসতির জন্য এটি হুমকিস্বরূপ। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলে জমাকৃত বরফ গলতে শুরু করবে। ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে জনজীবন ও বসতি বিপন্ন হবে। তাই বৈশ্বিক উষ্ণতা বিপজ্জনক।

Leave a Comment