বিষয়:চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন,চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা কী?
চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালংশাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩।
মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে চিয়া নামে এক ধরনের গাছ জন্মায়। পুদিনা পরিবারের ছোট এই গাছটির বীজ হচ্ছে চিয়া সিড। সাদা, কালো ও বাদামি রঙের চিয়া সিডগুলো আকারে খুবই ছোট, অনেকটা তিলের মতো। পানিতে ভেজালে চিয়া সিড ফুলে উঠে ১২ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে।
প্রাচীনকাল থেকে চিয়া সিড মানুষের রসনা তৃপ্ত করে আসছে। অ্যাজটেক এবং মায়ান সভ্যতার সময়ে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি চিয়া সিড রূপচর্চা করতে ব্যবহার করা হতো। এর অনেক ঔষধিগুণ আছে বলে বিশ্বাস করত অ্যাজটেক ও মায়ান আদিবাসীরা। সে কারণে সাধারণ অসুখে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল তাদের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এক আউন্স (২৮ গ্রাম) চিয়া সিডে আছে;
ফাইবার- ১১ গ্রাম
প্রোটিন- ৪ গ্রাম
ফ্যাট- ৯ গ্রাম (যার ৫ গ্রাম আবার Omega-3s)
ক্যালসিয়াম- RDA (Recommended Dietary Allowance) এর ১৮%
ম্যাঙ্গানিজ- RDA এর ৩০%
ম্যাগনেসিয়াম- RDA এর ৩০%
ফসফরাস- RDA এর ২৭%
সমুচিত পরিমাণে জিঙ্ক, ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন), পটাশিয়াম, ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) ও ভিটামিন বি২
এনার্জি – ১৩৭ ক্যালোরি,
কার্বোহাইড্রেড – ৩ গ্রাম
জিঙ্ক – ১ মিলিগ্রাম
তামা – ১ মিলিগ্রাম,
পটাশিয়াম – ৮ মিলিগ্রাম,
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
পুষ্টিবিদরা চিয়া সিডকে সুপারফুড নামে ডাকতে ভালোবাসেন। কারণ এতে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।
চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩।
পুষ্টিকর এই খাবারটি সপ্তাহের সাত দিনই খাওয়া যায়। তবে ৩-৪ দিন খেলেও শরীরে উপকারে আসে।
চিয়া সিড খাওয়ার ২০টি উপকারিতা
১। চিয়া বীজ এ রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ কোষ ও ত্বকের রক্ষনাবেক্ষন করে থাকে। এন্টি অক্সিডেন্ট আপনার মুখে বয়সের ছাপ রোধ করবে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় এটাও প্রমাণিত যে এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। চুল ও ত্বক চকচকে ও প্রাণবন্ত রাখতেও এর জুড়ি নেই। তাই দেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর ঘাটতি মেটাতে চিয়া বীজ হতে পারে খুব ভালো একটি সমাধান।
২। চিয়া সীড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে
৩। চিয়া সীড ওজন কমাতে সহায়তা করে। যদি কোনও ব্যক্তি ওজন হ্রাস করার চেষ্টা করে তবে তার জন্য চিয়া সীড খুব উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে। শরীরের ওজন কমতে শুরু করে।
৪। চিয়া সীড ব্লাড সুগার (রক্তের চিনি) স্বাভাবিক রাখে, ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। অর্থাৎ চিয়াতে এমন অনেক পুষ্টি রয়েছে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। যা ইনসুলিন তৈরিতে সহায়তা করে। শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫। চিয়া সীড হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারি। হাড়কে শক্তিশালী করার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিন থাকে। এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম এর পরিমান চোখে পড়ার মতো। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।যারা দুধ বা দুগ্ধ জাত খাবার খেতে পারেন না তাদের জন্য খুব ভালো একটি ক্যালসিয়াম এর উৎস চিয়া সীড, যা হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে। হাড়কে শক্তিশালী করার কারণে হাড়ের সমস্যা হয় না।
৬। চিয়া সিড মলাশয় (colon) পরিষ্কার রাখে ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
৭। চিয়া সিড শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের করে দেয়
৮। চিয়া সীড প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে
৯। চিয়া সীড পরিপূর্ণভাবে ঘুম হতে সাহায্য করে।
১০। চিয়া সীড ক্যান্সার রোধ করে
১১। চিয়া সিড হজমে সহায়তা করে, চিয়া সীড এ রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা মলাশয় পরিষ্কার রাখে। নিয়মিত সেবনে এটি পেট পরিষ্কার রাখবে কোষ্টকাঠিন্য দূর হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
১২। চিয়া সীড হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে
১৩। চিয়া সীড এটেনশান ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসর্ডার (Attention deficit hyperactivity disorder ADHD) দূর করে
১৪। চিয়া সিড ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে
১৫। চিয়া সীড গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়
১৬। চিয়া সীড এ যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে।ওজন অনুসারে প্রায় 14% প্রোটিন থাকে চিয়া বীজে যা বেশিরভাগ উদ্ভিদের তুলনায় অনেক বেশি। যারা ভেজিটেরিয়ান তাদের জন্য খুব ভালো একটি প্রোটিন এর উৎস এটি। এছাড়াও পরিপূরক খাদ্য হিসেবেও এটি প্রোটিন এর ঘাটতি মেটাতে পারবে।
১৭। এটা শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে কারণ চিয়াতে প্রাকৃতিকভাবে অনেক খনিজ এবং ভিটামিন থাকে। যা শরীরে শক্তি জোগায়। শরীরে আরও বেশি কাজ করার ক্ষমতা থাকা শুরু করে।
১৮। চিয়া সীড এ খুব ভালো পরিমান ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছেপরিমানে যা সামুদ্রিক মাছ স্যামন এর থেকেও বেশি।তবে চিয়া সীডস থেকে প্রাপ্ত ওমেগা-৩ অতটাও উন্নত নয় যতটা আসলে ভাবা হয় কারণ চিয়া বীজ ALA সরবরাহ করে যা দুর্ভাগ্যবশত মানবদেহ সক্রিয়রূপে রূপান্তর করতে অক্ষম।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-৩ ফ্যাট হচ্ছে DHA যা চিয়া সীড সরবরাহ করতে পারে না।
১৯। চিয়া সীডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সক্ষম।ইঁদুরের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া সীড ট্রাইগ্লিসারাইড, প্রদাহ, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং পেটের চর্বি সহ কিছু ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করতে পারে এবং ভালো এইচডিএল কোলেস্টেরলও বাড়িয়ে তুলতে পারে।এছাড়াও কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজ উচ্চ রক্তচাপের মানুষের রক্তচাপকে
উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। তাই হার্ট এর সুস্থতায় চিয়া সীড হতে পারে আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী।
২০। ব্লাড সুগার লেভেল নরমাল রাখে। ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্ট্রল কমায়।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি বিপরীত অপকারিতাও থাকে কিছুনা কিছু। তেমনই চিয়া সিডের ও কিছু অপকারিতা রয়েছে।
১. কয়েকজন বিজ্ঞানীর দ্বারা পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে যে চিয়া সিড প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং এটি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
২. চিয়া সিড বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই অল্প পরিমাণে চিয়া খাওয়া উচিত। আর স্বাস্থ্য সমস্যা মনে হলে সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ কড়া উচিত।
৩. অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
৪. চিয়া সিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। তাই অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ান সম্ভাবনা থাকে।