Illuminati , 15 শতক থেকে ব্যবহৃত পদবী , যারা অস্বাভাবিকভাবে আলোকিত বলে দাবি করেছেন তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বারা অনুমান বা প্রয়োগ করা হয়েছে । শব্দটি ল্যাটিন illuminatus (“প্রকাশিত” বা “আলোকিত”) এর বহুবচন।
ইলুমিনাতি কি আসল?
তথাকথিত ইলুমিনাতির ইতিহাস এবং উত্স সম্পর্কে আরও জানুন।এই
অনুগামীদের মতে, “আলোর” উত্সটিকে উচ্চতর উত্স থেকে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়েছে বা মানুষের বুদ্ধিমত্তার একটি স্পষ্ট এবং উচ্চতর অবস্থার কারণে দেখা হয়েছিল । প্রাক্তন শ্রেণীর অন্তর্গতঅ্যালুম্ব্রাডোস (স্প্যানিশ: “আলোকিত”) স্পেনের । স্প্যানিশ ইতিহাসবিদMarcelino Menendez y Pelayo প্রথম 1492 সালের নামটি খুঁজে পান ( অ্যালুমিনাডোস , 1498 আকারে ) কিন্তু সেগুলিকে একটি নস্টিক উত্সের দিকে ফিরিয়ে আনেন এবং মনে করেন যে তাদের মতামত ইতালির প্রভাবের মাধ্যমে স্পেনে প্রচার করা হয়েছিল ।
তাদের প্রথম দিকের নেতাদের মধ্যে একজন – প্রকৃতপক্ষে, কিছু পণ্ডিত তাকে “প্রি-অ্যালুমব্রাডো” হিসাবে স্টাইল করেছেন-মারিয়া দে সান্টো ডোমিঙ্গো, যিনি লা বিটা দে পিড্রাহিতা নামে পরিচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন শ্রমিকের কন্যা, 1485 সালের দিকে সালামানকার দক্ষিণে অ্যালদেনুয়েভাতে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি কিশোর বয়সে ডোমিনিকান অর্ডারে যোগ দিয়েছিলেন এবং শীঘ্রই একজন নবী এবং রহস্যবাদী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যিনি যীশু খ্রিস্ট এবং ভার্জিনের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন ।
What is the Illuminati, ইলুমিনাতি রহস্য, ইলুমিনাতি নামটি কী বোঝায়?,ইলুমিনাতি কি? ইলুমিনাতির অস্তিত্ব কি আছে?
আরাগনের ফার্ডিনান্ড তাকে তার দরবারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গির আন্তরিকতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন। ডোমিনিকানরা পোপ জুলিয়াস II এর কাছে নির্দেশনার জন্য আবেদন করেছিল এবং ইনকুইজিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় একাধিক বিচারের আয়োজন করা হয়েছিল । তার পৃষ্ঠপোষক, যা ততক্ষণে শুধু ফার্দিনান্দই নয়, অন্তর্ভুক্ত ছিলফ্রান্সিসকো কার্ডেনাল জিমেনেজ ডি সিসনেরোস এবংআলবার ডিউক , নিশ্চিত করেছিলেন যে তার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং তাকে 1510 সালে সাফ করা হয়েছিল।
লয়োলার সেন্ট ইগনাশিয়াস
লোয়োলার সেন্ট ইগনাশিয়াস , সালামানকা (1527) তে অধ্যয়নরত অবস্থায়, অ্যালুমব্রাডোসের প্রতি সহানুভূতির অভিযোগে একটি ধর্মীয় কমিশনের সামনে হাজির হন , কিন্তু তিনি একটি উপদেশ দিয়ে পালিয়ে যান । অন্যরা এত ভাগ্যবান ছিল না।
1529 সালে টলেডোতে অশিক্ষিত অনুগামীদের একটি মণ্ডলীকে বেত্রাঘাত ও কারারুদ্ধ করা হয়েছিল । বৃহত্তর কঠোরতা অনুসরণ করা হয়, এবং প্রায় এক শতাব্দী ধরে অ্যালুমব্রাডোস ইনকুইজিশনের অনেক শিকারকে বহন করে, বিশেষ করে কর্ডোবায় ।
আন্দোলনটি ( ইলুমিনিস নামে ) 1623 সালে সেভিল থেকে ফ্রান্সে পৌঁছেছিল বলে মনে হয়। পিকার্ডিতে (1634) সেন্ট-জর্জেস দে রয়ের কিউর পিয়েরে গুয়েরিন যোগদানের পর এটি কিছু প্রাধান্য লাভ করে , যার অনুসারীরা গুয়েরিনেট নামে পরিচিত ছিল। 1635 সালে দমন করা হয় । 1722 সালে ফ্রান্সের দক্ষিণে ইলুমিনেসের আরেকটি দেহ আবির্ভূত হয়েছিল এবং 1794 সাল পর্যন্ত স্থির ছিল বলে মনে হয়, সমসাময়িকভাবে “ফরাসি নবী” নামে পরিচিতদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে, যা প্রোটেস্ট্যান্ট জঙ্গি ক্যামিসার্ডের একটি শাখা ।
রবার্ট ফ্লুড
রবার্ট ফ্লুড, ইন্টিগ্রাম মরবোরাম মিস্টেরিয়াম , 1631 থেকে একটি খোদাইয়ের বিশদ ।
ফ্রান্সিস বেকন
একটি ভিন্ন শ্রেণীর ছিলরোসিক্রুসিয়ানরা , যারা 1422 সালে উদ্ভূত বলে দাবি করেছিল কিন্তু 1537 সালে জনসাধারণের নোটিশ অর্জন করেছিল। তাদের শিক্ষাগুলি মিশরীয় হারমেটিজম , খ্রিস্টান জ্ঞানবাদ, ইহুদি কাব্বালা , আলকেমি এবং অন্যান্য বিভিন্ন জাদু বিশ্বাস ও অনুশীলনের কিছু সম্মিলিত করেছিল। রোসিক্রুসিয়ান আদেশের উল্লেখ করা প্রাচীনতম বর্তমান লেখাটি ছিলFama Fraternitatis , প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল 1614 সালে কিন্তু সম্ভবত এর থেকে কিছুটা আগে পাণ্ডুলিপি আকারে প্রচারিত হয়েছিল। এটি আন্দোলনের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠাতার যাত্রা বর্ণনা করে,ক্রিশ্চিয়ান রোজেনক্রুজ , দামেস্ক , ড্যামকার (আরবে একটি কিংবদন্তি লুকানো শহর), মিশর এবং ফেস , যেখানে তিনি ভালভাবে সমাদৃত হয়েছিলেন এবং অনেক গোপন জ্ঞানের অধিকারী হয়েছিলেন।
তিনি অবশেষে জার্মানিতে ফিরে আসেন , যেখানে তিনি আরও তিনজনকে বেছে নিয়েছিলেন যাদেরকে তিনি এই জ্ঞান প্রদান করেছিলেন এবং এইভাবে আদেশটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে সংখ্যা বাড়িয়ে আট করা হয়, যারা আলাদা হয়ে যায়, প্রত্যেকে আলাদা দেশে চলে যায়। তারা গৃহীত চুক্তির ছয়টি অনুচ্ছেদের মধ্যে একটি ছিল যে ভ্রাতৃত্ব 100 বছরের জন্য গোপন রাখা উচিত। 120 বছরের শেষে গোপন কবরস্থান এবং প্রতিষ্ঠাতার নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত দেহটি অর্ডারের তৎকালীন একজন সদস্য দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল, সাথে কিছু নথি এবং চিহ্ন রোসিক্রুসিয়ানদের দ্বারা অত্যন্ত সম্মানের সাথে রাখা হয়েছিল।
পবিত্র খিলানটি আবার আচ্ছাদিত করা হয়েছিল, আদেশের সদস্যরা ছড়িয়ে পড়েছিল এবং খিলানের অবস্থান ইতিহাস থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। ফামা ভ্রাতৃত্বে যোগদানের জন্য “কয়েক জনকে” আমন্ত্রণ জানিয়ে শেষ হয় । এই আদেশের সাথে জড়িত বলে বিশ্বাস করা ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন জার্মান আলকেমিস্টমাইকেল মায়ার , ব্রিটিশ চিকিৎসকরবার্ট ফ্লুড , এবং ব্রিটিশ দার্শনিক এবং রাষ্ট্রনায়কস্যার ফ্রান্সিস বেকন ।
ইলুমিনাতি কি? ইলুমিনাতির অস্তিত্ব কি আছে?
ইলুমিনাতি, প্রাচীনকাল থেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পৃথিবীবাসির কাছে পরিচিত একটি শব্দ। সাধারণভাবে বলতে গেলে ইলুমিনাতি শব্দের অর্থ হলো ‘আলোকিত জগত’। মূলত এই আলোকিত জগতের নাড়ি-নক্ষত্র কতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভয়াবহ তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। বলা হয়ে থাকে বিগত দুইশ বছরে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সব বড় বড় যুদ্ধ, রাজনৈতিক ও সামজিক ঘটনাবলীর পেছনে রয়েছে ইলুমিনাতির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব। ইলুমিনাতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে ইলুমিনাতি প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের দিকে।
যেভাবে শুরু ইলুমিনাতির
পয়লা মে, ১৭৭৬ সাল। জার্মানির ব্যাভারিয়া রাজ্যের ইঙ্গলস্তাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এডাম ওয়েইশপ্টসহ মাত্র ৫ জন সদস্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ইলুমিনাতি। বাকি চারজন সদস্য ছিল তার অনুগত ছাত্র। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যেখানে কুসংস্কার থেকে সমাজকে মুক্ত রাখা। যাদের মধ্যে কোনো ধর্ম ভেদাভেদ থাকবে না সেই সঙ্গে মানুষ মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারবে। ইলুমিনাতির প্রতীক হিসেবে শুরুতে রোমান রূপকথার জ্ঞানের দেবী মিনারভার পেঁচাকে বেছে নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পিরামিডের মাঝে একচোখ ইলুমিনাতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কারা হত ইলুমিনাতির সদস্য
প্রথমদিকে খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করে সদস্য বাছাই করা হত, যেন বাইরের কেউ তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে না পারে। শিক্ষিত এবং সচ্চরিত্রবান ক্যাথলিকদের সদস্য হিসেবে বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো সদস্য হতে। ইহুদী, নারী, ধর্মগুরু এবং অন্য সিক্রেট সোসাইটির সদস্যদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল ইলুমিনাতির সদস্য হওয়া। এই সংগঠনে স্বাগত জানানো হত ধনী, শিক্ষানবিশ আর ১৮-৩০ বছরের তরুণদের। ধীরে ধীরে ইউরোপ জুড়েও ছড়িয়ে পড়তে লাগল ইলুমিনাতির শাখা। ১৭৮৪ সালে ইলুমিনাতির সদস্য সংখ্যা হয়ে দাড়াঁয় ৬৫০-এ। এডাম তার নিজেরসহ বাকি সদস্যদের ছদ্দ নাম রাখতেন। যেন সহজেই তাদের কেউ ধরতে না পারে। অ্যাডামের নিজের নাম হলো স্পার্টাকাস।
একদম সেকুলার হবার কারণে ইলুমিনাতির অভ্যন্তরে ধর্মবিদ্বেষ চোখে পড়তে লাগল। ইলুমিনাতি যে একটি নাস্তিক সংঘ, তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, সেটা রটে গেল ইউরোপে। ধর্মহীন ইলুমিনাতির বিরুদ্ধে জোর গণমত গড়ে উঠল। ব্যাভারিয়ার শাসক চার্লস থিওডোর ১৭৮৫ সালের ২ মার্চ ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং সদস্যদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। তখন অ্যাডাম ফ্রান্সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও বন্ধ হয়ে যায় ইলুমিনাতির কার্যক্রম। জব্দ করা হয় গোপনীয় বেশ কিছু নথিপত্র। এডামের পালিয়ে যাওয়ার দু’বছর বাদে সরকার সেসব নথি প্রকাশ করে জনসম্মুখে। এরপর ইলুমিনাতির কী হয়েছে সে তথ্য আজও ইতিহাস আমাদের নিশ্চিত করেনি।
সে সময় ইলুমিনাতি বন্ধ করলেও মানুষের মনে এই বিষয়ে সন্দেহ, কৌতুহল শেষ হয়ে যায়নি। বরং যুগে যুগে ইলুমিনাতি নিয়ে সংশয় আর ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ঘুরপাক খেয়েছে মানুষের মুখে মুখে। ১৭৯৮ সালে জন রবিনসন নামক একজন লেখক তার ‘প্রুফস অব কনপাইরেসি’ বইয়ের মাধ্যমে দাবি করেন ফরাসি বিপ্লবের পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে ইলুমিনাতি এবং এর সদস্যরা। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু লেখক তাদের কয়েকটি বইয়ের দাবি ইলুমিনাতি এখনো বেঁচে আছে। বরং আগের তুলনায় তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে।
এই সময়ে এসে ধারণা করা হয় ইলুমিনাতির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যাংকার, রাজনীতিবিদ এবং বিশ্ব মিডিয়ার রাঘব বোয়ালরা এবং তারাই বিশ্বের সকল দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশ ও জাতি নির্বিশেষে মানুষের ধর্মীয়, মানবিক, সামাজিক এমনকি ব্যক্তিগত অস্তিত্বের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা।
ইলুমিনাতির সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচিত হয় ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’। এই প্রজেক্ট অনুযায়ী বিশ্ব থাকবে ইলুমিনাতির অনুগামী এবং পৃথিবীর সব মানুষ হবে ইলুমিনাতিতে বিশ্বাসী। বর্তমানে বেশ কিছু সংগঠন প্রকাশ্যে নিজেদের ইলুমিনাতি পরিচয় দেয় কিন্তু ব্যাভারিয়ান ইলুমিনাতির প্রধান লক্ষ্যই ছিল নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে নিরবে কাজ করে যাওয়া। তবে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বড় বড় ঘটনার সঙ্গে ইলুমিনাতির সম্পৃক্ততা ব্যাখ্যা করা হলেও এর কোনো সঠিক প্রমাণ আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি।
ইলুমিনাতি: সত্য নাকি মিথ্যা?
অভিজাতরা বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা ইন্টারনেটের কল্যাণে অনেক মানুষই শুনেছেন। এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্বে যে প্রভাবশালী সমাজের কথা বলা হয় তাই হলো ‘ইলুমিনাতি’। ইলুমিনাতি তত্ত্ব কতোটা সত্য মিথ্যা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে এই তত্ত্ব অতীতের সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত তত্ত্বকে ছাড়িয়ে গেছে। আর পশ্চিমাদের এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশের অনেকেরও আগ্রহের শেষ নাই। বিবিসি এমনই কয়েকটি ইলুমিনাতি তত্ত্ব তুলে ধরেছে।
১৯৬০ সালে কল্পিত উপন্যাসে ইলুমিনাতির ধারণাগুলো তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে গোপন একটা সমাজের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছিল। যাদের কাজই হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করা। ইলুমিনাতি সম্পর্কে জানতে হলে আগে ইতিহাস জানতে হবে।
জার্মানিতে এনলাইটমেন্টের যুগে ইলুমিনাতির অস্তিত্ব ছিল। ১৭৭৬ সালে বাভারিয়ান গুপ্ত সমাজ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের কাজ ছিল প্রতিদিনের জীবনে ধার্মিক ও অভিজাত মানুষের প্রভাব দূর করা। তারা প্রগতিশীল ছিল। কিন্তু রক্ষণশীল ও খ্রিস্টান সমালোচকরা তাদের বিতাড়িত করে। ধীরে ধীরে এই সমাজের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়।
লেখক ডেভিড ব্রামওয়েল এই ইলুমিনাতি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। তিনি এ সম্পর্কে বিশদ গবেষণা করেছেন। ব্রামওয়েল বিবিসিকে ইলুমিনাতির পেছনের ঘটনা জানান। তিনি জানান, ১৯৬০ সালে সংস্কৃতি বিরোধিতা, মাদক এবং প্রাচ্যের দর্শনের প্রভাব বাড়তে থাকলে তা এই ছোট সমাজকে পুনরায় জেগে উঠতে সাহায্য করে।
এরপর প্রিন্সিপিয়া ডিসকর্ডিয়া নামের একটি বই বের হয়। যা ডিসকর্ডিয়া ধর্মের প্রচলন করে। এরিস নামে একজন দেবতাকে এ বইয়ের মাধ্যমে পাঠককে উপাসনা করতে বলা হয়। এরিস হচ্ছেন নৈরাজ্যের দেবতা। এ ধর্মের অনুসারীরা অরাজকতা, ধাপ্পাবাজি, কৌতুক ও অবাধ্যতায় বিশ্বাসী।
ব্রামওয়েলের মতানুসারে, রবার্ট অ্যান্টন উইলসন ও কেরি থর্নলি মনে করতেন যে সারা বিশ্ব অনেক বেশি স্বৈরাচারী, সংকুচিত, আঁটোসাটো, ছোট ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তাই তাঁরা সমাজকে নাড়া দিতে চেয়েছিল। ভুল তথ্য দিয়ে তাঁরা কাজ হাসিল করার পরিকল্পনা নেয়। যে কোনোভাবেই হোক তাঁরা এ ভুল তথ্য সারা পৃথিবী ছড়িয়ে দিবে। সেটা গণমাধ্যম হোক বা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমই হোক। শুরুটা তাঁরা করতে চেয়েছিল ইলুমিনাতি নিয়ে গল্প তৈরির মধ্য দিয়ে।
এ সময়ে উইলসন ‘প্লেবয়’ নামে একটি ম্যাগাজিনে কাজ করতেন। তিনি আর থর্নলি মিলে ম্যাগাজিনটির অফিসে ভুয়া চিঠি পাঠাতে শুরু করল। চিঠিতে তাঁরা ইলুমিনাতি নিয়ে আলোচনা করত। আবার অন্য চিঠিও পাঠাল যা তাঁদের আগের চিঠির সম্পূর্ণ বিপরীত।
ব্রামওয়েল জানান, সম্পূর্ণ বিপরীত চিঠি লিখে ইলুমিনাতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা। ইলুমিনাতির ধারণাকে দুনিয়াজুড়ে জনপ্রিয় করতে উইলসন এবং অন্য লেখকেরা ‘দ্য ইলুমিনাতাস! ট্রিওলজি’ লেখেন। তাঁরা বাস্তব ঘটনাকে তুলে ধরে এমনভাবে এ ধারণাকে উপস্থাপন করেন যা পরে সাড়া পড়ে যায়। যেমন, জন এফ কেনেডিকে কে খুন করেছে এমন বিষয়ও এ বইয়ে তুলে ধরা হয়। লিভারপুলে এ বইয়ের কাহিনী নিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। এ নাটকে অভিনয়ের খাতিরে বিল নাই ও জিম ব্রডবেন্ট বিখ্যাত হয়ে যান।
১৯৭৫ সালে ইলুমিনাতি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু করে। সারা বিশ্ব এখন এই চক্রান্ত তত্ত্ব নিয়ে মাতামাতি করছে। এমনকি পশ্চিমের জনপ্রিয় সংগীত তারকা জেজে ও বিয়ন্সেও এর প্রতীক ব্যবহার করা শুরু করেছে।
অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইলুমিনাতিতে যাঁরা বিশ্বাস করেন তাদের মানসিক রোগ রয়েছে। যাদের অনেক কষ্টের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং এর আগে কষ্টের জীবন পার করেছে তাঁরা এ ধরনের তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। কিন্তু যারা মোটামুটি শিক্ষিত তারা এ তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও চক্রান্ত তত্ত্ব দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। বারাক ওবামার জন্ম নিয়ে প্রশ্ন করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষ যদি মূল রাজনীতির বাইরে এই চক্রান্ত তত্ত্বে বিশ্বাস করা শুরু করে তবে তা একটি অশনি সংকেত। কারণ এর ফলে উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা জেগে উঠবে। অন্য বর্ণের প্রতি ঘৃণা বাড়া শুরু করবে।
খেয়াল করলে দেখা যায়, ইলুমিনাতির ধারণা যারা ছড়ান তাঁরা সবসময় ইতিহাসের ঘোলাটে ও অস্পষ্ট ঘটনাকেই তুলে ধরেন এবং বিভ্রান্তি ছড়ান। ফলে তাঁরা সফল হন খুব সহজেই। বর্তমানে ইনটারনেটের যুগে খুব সহজে মানুষকে এই ধারণা ছড়িয়ে দিয়ে আরও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
সূত্র: ইন্টারনেট
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।