আজকের বিষয়: ৩ কুল এর ফজিলত, নবিজী (সা.) তিন তাসবিহ ৩ কুল কেন পড়তেন?,তিন কুল পড়ার ফজিলত ও আমলের পদ্ধতি, তিন কুল এর ফজিলত,আয়াতুল কুরসি ও তিন কুল পাঠের গুরুত্ব, তিন কুল: প্রত্যেক বস্তুর বিপদাপদের মোকাবিলায় যথেষ্ট
শুরুতে আমরা ঐ সকল হাদীস উল্লেখ করব, যেগুলোতে তিন কুল পড়ার ফজিলত একত্রে বর্ণিত হয়েছে। এরপর ঐ সকল হাদীস উল্লেখ করব, যেগুলোতে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাসের ফজিলত ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
দুইটি পরিভাষা
المعوذتان (মু’আওয়িযাতান): শব্দটি হাদীসে সুরা ফালাক ও সুরা নাসকে একত্রে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়েছে।
المعوذات (মু’আওয়িযাত): শব্দটি হাদীসে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস, এই তিন সুরাকে একত্রে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়েছে। আমরা অনুবাদের সময় এই শব্দের অর্থ তিন কুল লেখেছি।
১. সকাল-সন্ধ্যায় তিন কুল পড়লে সকল ক্ষতিকর বস্তু থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়
আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব রা. বলেন-
خرجنا في ليلة مطيره وظلمة شديدة، نطلب النبيّ صلى الله عليه وسلم ليصلي لنا، فأدركناه فقال: قُلْ، فلم أقل شيئاً، ثم قال: قُلْ، فلم أقل شيئاً، قال: قُلْ، فقلت: ما أقولُ؟ قال: قُلْ هُوَ اللَّهُ أحَدٌ وَالمُعَوِّذَتَيْنِ، حِينَ تُمْسِي وَتُصْبِحُ ثَلاثَ مَرَّاتٍ، تَكْفِيكَ مِنْ كُلّ شئ
আমরা এক বৃষ্টির রাতে প্রচন্ড অন্ধকারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোঁজে বের হলাম, যাতে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। আমরা তাকে খুঁজে পেলাম। তিনি বললেন, বলো। আমি কিছু বললাম না। তিনি আবার বললেন, বলো। আমি কিছু বললাম না। তিনি আবারো বললেন, বলো। আমি বললাম, কী বলব? তিনি বললেন, তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে তিনবার করে পড়বে- قُلْ هُوَ اللَّهُ أحَدٌ (সুরা ইখলাস) এবং মুয়াওয়িযাতাইন (অর্থাৎ সুরা ফালাক ও সুরা নাস)। তাহলে এটি সব (ক্ষতিকর) বস্তু থেকে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
–জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৮২
২. প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তিন কুল পড়া
উকবা ইবনে আমের রা. বলেন-
أمرني رسول الله صلى الله عليه وسلم أن أقرأ بالمعوذات دبر كل صلاة
আমাকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পর তিন কুল পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫২৩
৩. রাতে ঘুমানোর আগে তিন কুল পড়ে শরীরে হাত বুলানো
আয়েশা রা. বলেন-
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان إذا أتى إلى فراشه في كل ليلة جمع كفّيه، ثم نفث فيهما، وقرأ فيهما: قُلْ هُوَ الله أحد، وقل أعوذ برب الفلق، وقل أعُوذُ بِرَبّ الناس، ثُم مسح بهما ما استطاع من جسده، يبدأ بهما على رأسه ووجهه، وما أقبل من جسده، يفعل ذلك ثلاثَ مرّاتٍ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিরাতে যখন বিছানায় যেতেন, দুই হাত মেলাতেন (মুনাজাতের সময় হাত তোলার মতো করে)। এরপর হাতের উপর قُلْ هُوَ الله أحد (সুরা ইখলাস), قل أعوذ برب الفلق (সুরা ফালাক) ও قل أعُوذُ بِرَبّ الناس (সুরা নাস) পাঠ করতেন। এরপর হাতে ফুঁ দিতেন। এরপর দুই হাত দিয়ে শরীরের যতটুকু অংশে সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। শুরু করতেন মাথা, চেহারা এবং শরীরের অগ্রভাগ থেকে। এভাবে (পুর্ণ কাজটি) তিনি তিনবার করতেন।
–মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৮৫৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০১৭
৪. অসুখ হলে তিন কুল পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে হাত বুলানো
আয়েশা রা. বলেন-
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا اشتكى نفث على نفسه بالمعوذات، ومسح عنه بيده، فلما اشتكى وجعه الذي توفي فيه، طفقت أنفث على نفسه بالمعوذات التي كان ينفث، وأمسح بيد النبي صلى الله عليه وسلم عنه
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ হতেন, তখন তিন কুল পড়ে (হাতে) ফুঁ দিতেন এবং (নিজের শরীরে) হাত বুলাতেন। যখন তিনি অন্তিম শয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমি তিন কুল পড়ে ফুঁ দিতাম এবং তার হাতে হাত বুলাতাম।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০১৬, ৫৭৩৫, ৫৭৫১
সুরা ইখলাসের ফজিলত : সুরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশ
আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন-
قال النبي صلى الله عليه وسلم لأصحابه: أيعجز أحدكم أن يقرأ ثلث القرآن في ليلة؟ فشق ذلك عليهم وقالوا: أينا يطيق ذلك يا رسول الله؟ فقال: الله الواحد الصمد ثلث القرآن
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের বললেন, তোমাদের কেউ কি এমন আছে যে একরাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? এটা সাহাবীদের কাছে অনেক কঠিন মনে হল। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কার পক্ষে সম্ভব? তখন তিনি বললেন, সুরা ইখলাস হল কুরআনের এক তৃতীয়াংশ।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০১৫
অন্য একটি হাদীসে এসেছে-
আল্লাহর নবীর যামানায় এক ব্যক্তি শেষরাতে বারবার শুধু সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করছিল। অন্য কিছু পড়ছিল না। অপর ব্যক্তি ঘটনাটি দেখে এটাকে (শুধু সুরা ইখলাস পড়াকে) কম (আমল) মনে করল, এবং সকালে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করল। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় সুরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।
হাদীসের আরবী পাঠ এই-
عن أبي سعيد الخدري أن رجلا سمع رجلا يقرأ: قل هو الله أحد يرددها، فلما أصبح جاء إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكر ذلك له، وكأن الرجل يتقالها، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: والذي نفسي بيده إنها لتعدل ثلث القرآن
عن أبي سعيد الخدري، أخبرني أخي قتادة بن النعمان: أن رجلا قام في زمن النبي صلى الله عليه وسلم يقرأ من السحر: قل هو الله أحد لا يزيد عليها، فلما أصبحنا أتى الرجل النبي صلى الله عليه وسلم نحوه
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০১৩, ৫০১৪
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
- নামাজে আমরা যা বলি , তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা !!
- “লা আদওয়া” সংক্রমন নেই!হাদীসটি কী বুঝায়?
- রমজানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যত পরামর্শ
- ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন
- আজহারী: কোন ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙে
সুরা ইখলাস আল্লাহর ভালোবাসা লাভের উপায়
আয়েশা রা. বলেন-
أن النبي صلى الله عليه وسلم بعث رجلا على سرية، وكان يقرأ لأصحابه في صلاتهم فيختم بقل هو الله أحد، فلما رجعوا ذكروا ذلك للنبي صلى الله عليه وسلم، فقال: سلوه لأي شيء يصنع ذلك؟ فسألوه، فقال: لأنها صفة الرحمن، وأنا أحب أن أقرأ بها، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: أخبروه أن الله يحبه
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। ঐ ব্যক্তি তার সঙ্গীদের নিয়ে নামাযে সুরা ইখলাস দিয়ে কেরাত শেষ করত। যখন তারা ফিরে আসল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করল। নবীজী বললেন, তাকে জিজ্ঞেস কর, কেন সে এমনটি করে? তারা তাকে জিজ্ঞেস করল। সে বলল, কারণ এই সুরাটি হচ্ছে রহমানের গুণ (অর্থাৎ, এতে আল্লাহর গুণাবলী আলোচনা করা হয়েছে), আর আমি এই সুরা পড়তে ভালোবাসি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বল যে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৩৭৫
সুরা ফালাক ও সুরা নাসের ফজিলত
উকবা ইবনে আমের রা. বলেন-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ألم تر آيات أنزلت الليلة لم ير مثلهن قط قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জানো? আজ রাতে এমন কিছু আয়াত নাযিল হয়েছে, যার মতো আয়াত আগে কখনো দেখা যায়নি। এরপর তিনি সুরা ফালাক ও সুরা নাসের কথা উল্লেখ করেছেন।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮১৪
সুরা ফালাক ও সুরা নাস জ্বীন থেকে ও মানুষের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া
আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন-
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يتعوذ من الجان وعين الإنسان حتى نزلت المعوذتان فلما نزلتا أخذ بهما وترك ما سواهما
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিভিন্ন ভাবে) জ্বীন থেকে ও মানুষের বদ নজর থেকে (আল্লাহর কাছে) পানাহ চাইতেন। যখন সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাযিল হল, তখন তিনি এই দুই সুরা আঁকড়ে ধরলেন আর অন্যসব ছেড়ে দিলেন।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৫৮
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আয়াতুল কুরসি ও তিন কুল পাঠের গুরুত্ব
প্রতিদিন পঠিতব্য ফজিলতপূর্ণ সুরা ও আয়াতের মধ্যে ‘আয়াতুল কুরসি’ ও ‘তিন কুল’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এগুলো পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো—
আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসি পবিত্র কোরআনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ একদিন আবুল মুনজিরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আবুল মুনজির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াত তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? আবুল মুনজির বলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সর্বাধিক অবগত। রাসুল (সা.) আবার বলেন, হে আবুল মুনজির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াত তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? তখন আমি বললাম, আয়াতুল কুরসি (আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ)।এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের ওপর হাত রেখে বলেন, হে আবুল মুনজির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৭০; আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৬০)
আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বিছানায় যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য একজন প্রহরী থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার কাছে আসবে না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
নিয়মিত সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পাঠকারীর জন্য মৃত্যুর পর জান্নাত। আবু উমামা আল-বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। ’ (সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ১৫৯৫; সহিহ আল-জামে, হাদিস : ৬৪৬৪)
ফজর ও মাগরিবের পর তিন কুল
‘তিন কুল’ হলো সুরার শুরুতে ‘কুল’ শব্দ থাকা তিনটি সুরা। যেমন—সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস।
প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর ‘তিন কুল’ পাঠ করলে যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়া যায়। মুআজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বলেন, বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কী বলব? তিনি বলেন, তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও ফালাক পড়বে। এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)
‘তিন কুল’ সব ব্যাপারে যথেষ্ট। আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, এক ঘুটঘুটে অন্ধকার ও বৃষ্টিমুখর রাতে আমাদের নামাজ আদায় করানোর জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সন্ধানে বের হলাম। আমি তাঁর দেখা পেলে তিনি বলেন, বলো। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। তিনি পুনরায় বলেন, বলো। এবারও আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বলেন, বলো। এবার আমি প্রশ্ন করলাম, আমি কী বলব? তিনি বলেন, তুমি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সুরা ইখলাস ও আল-মুআউবিজাতাইন (সুরা ফালাক ও সুরা নাস) পাঠ করবে, আর তা সব ব্যাপারে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৫)
ঘুমের সময় ‘তিন কুল’
ঘুমের সময় ‘তিন কুল’ পড়ে শরীর মুছে নেবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রতি রাতে নবী (সা.) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্র করে হাতে ফুঁ দিয়ে যত দূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বোলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে তাঁর দেহের সম্মুখভাগের ওপর হাত বোলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
সুরা ইখলাসের ফজিলত
সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস বারবার পাঠ করতে শোনেন। সকাল হলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাজির হন এবং ব্যাপারটি তাঁর কাছে উল্লেখ করেন। আর ওই ব্যক্তি যেন উক্ত সুরার পাঠকে কম গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। তখন নবী (সা.) বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ ওই সত্তার কসম! নিশ্চয়ই এ সুরা কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৪৩)
সুরা ইখলাস পাঠকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) এক সাহাবিকে একটি মুজাহিদ দলের প্রধান করে অভিযানে পাঠালেন। সালাতে তিনি যখন তাঁর সাথিদের নিয়ে ইমামতি করতেন, তখন সুরা ইখলাস দিয়ে সালাত শেষ করতেন। তাঁরা যখন অভিযান থেকে ফিরে এলো, তখন নবী (সা.)-এর খেদমতে ব্যাপারটি আলোচনা করলেন। নবী (সা.) বলেন, তাকেই জিজ্ঞেস করো—কেন সে এ কাজটি করেছে? এরপর তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন—এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি আছে। এ জন্য সুরাটি পড়তে আমি ভালোবাসি। তখন নবী (সা.) বলেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। (বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৫)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
নবিজী (সা.) তিন তাসবিহ ৩ কুল কেন পড়তেন?
তিন তাসবিহ ও ৩ কুল নবিজীর প্রতিদিনের নিয়মিত আমল। পাশাপাশি আয়াতুল কুরসির আমলও একটি। এ আমলগুলোর ফজিলত অনেক বেশি। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নিজে করতেন এবং তাঁর উম্মতকে এ তিনটি আমল বেশি বেশি করার নির্দেশ দিয়েছেন। কী সেই তিন তাসবিহ ও ৩ কুলের আমল?
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনভর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সময়ে ৩টি আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলো- আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল এবং ৩ তাসবিহ। এ আমলগুলো প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এবং সকাল-সন্ধ্যায় করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। আমলগুলো এবং তা নিয়মিত করার কারণ-
১. আয়াতুল কুরসি
প্রতিদিন ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর ১ বার আয়াতুল কুরসি পড়ার কথা বলেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যদি কেউ ফরজ নামাজের পর এ আমল করেন আর সে যদি শিরক ও বান্দার হক সম্পর্কিত কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকে তবে মৃত্যুই তার জান্নাতে যাওয়ার জন্য একমাত্র বাঁধা। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক (প্রতিদিন) ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা থাকবে না।’ (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)
আর যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় ১ বার আয়াতুল কুরসি পড়ে তবে ওই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে তাঁর নিরাপত্তায় নিয়ে যান। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-
‘রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’
২. তিন কুল
কুরআনুল কারিমে শেষ ৩ সুরা যদি কেউ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১ বার পাঠ করে এসবের অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বলা হয়েছে। আবার সকাল এবং সন্ধ্যায় শোয়ার আগে যদি কেউ ৩ বার এ সুরাগুলো পাঠ করে তবে সারাদিন ও রাতের জন্য সব ক্ষতি থেকে মহান আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। হাদিসে পাকে এসেছে-
> শয়তানের অনিষ্ট ও জাদুটোনা থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এ তিন কুলের (সুরা) আমল খুবই কার্যকরী। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস ও এই দুই সুরা ( সুরা ফালাক ও সুরা নাস) পড়বে সে সব বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (তিরমিজি)
> ফজর আর মাগরিবের এই দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সুরা পড়ার কথা বলা হয়েছে।’ (আবু দাউদ)
> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি)
শুধু তা-ই নয়-
সকাল-সন্ধ্যায় (ফজর ও মাগরিবের পর) ৩ বার এবং অন্য তিন ওয়াক্তে ১বার করে নিয়মিত ছোট্ট এ তিনটি সুরা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ৮টি বিশেষ নেয়ামতে ধন্য হবেন। তাহলো- জান্নাত; আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি; গোনাহ থেকে মুক্তি; দারিদ্র থেকে মুক্তি; বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি; জাদুটোনা থেকে মুক্তি; শয়তানের আক্রমণ থেকে মুক্তি; যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্তি।
৩. তিন তাসবিহ
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ৩ তাসবিহ- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রত্যেক নামাজের পর তাসবিহ পড়ার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘ফাসাব্বিহহু আদবারাস সুজুদ’ দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন। এর মানে ‘এবং সেজদাসমূহের সমাপ্তির পর’ অর্থাৎ নামাজ শেষে তাসবিহ পড়।’ (বুখারি)
আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, ‘আল্লাহর তাসবিহ পাঠ কর; বলতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর যে তাসবিহ পড়তে বলেছেন। তাহলো-
> سُبْحَانَ الله (সুবহানাল্লাহ)- ৩৩বার;
> اَلْحَمْدُ لله (আলহামদুলিল্লাহ)- ৩৩বার; এবং
> اَللهُ اَكْبَر (আল্লাহু আকবার)- ৩৪বার।
শুধু প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরই নয়, এ তিন তাসবিহ সকাল-সন্ধ্যায় যেমন পড়া কথা বলেছেন বিশ্বনবি তেমনি তিনি রাতে শোয়ার সময়ও এ ৩টি তাসবিহ পড়া কথা বলেছেন।
সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি দিনভর যে ৩টি আমল সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার পড়তে বলেছেন; সে আমলগুলো বেশি বেশি করাই সর্বোত্তম সুন্নাত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসে ঘোষিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশিত আমলগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় নেয়ামত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড
Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !!
- ভাগে কোরবানির নিয়ম, অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করার নিয়ম, ভাগে কোরবানির যত বিধি বিধান
- কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
- ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব ও বিধান,ইসলামে কোরবানির যত ফজিলত গুরুত্ব ও শিক্ষা
- বৃষ্টির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, বৃষ্টির নামাজের পর আমল
- ইসতিসকার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, ইসতিসকার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইসতিসকার নামাজের পর আমল
- বাসর রাত সম্পর্কে ইসলামের বিধান,বাসর রাতের নামাজ